প্রাণ প্রাচুর্যের জন্য প্রয়োজন প্রকৃতি
অর্পিতা রায় শাওন, মো. সাইজুদ্দিন (সাজু ), ফাতেমা সাদিয়া ঐশী, মো. হুসাইন আহমদ ও ইশরাত জাহান শাফা
প্রকৃতিতে এবারের তাপমাত্রা কেমন? নিশ্চয়ই বলবেন আঁতকে ওঠার মতো। আসলেই তাই। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বসবাসের জন্য বিশ্ব বেশ কঠিন হয়ে উঠছে। প্রকৃতির প্রতিশোধ বা রিভেঞ্জ অভ নেচারে অসহায় মানুষেরা। অথচ এসবের জন্য আমরাই দায়ী। একদিকে আমরা বিরূপ জলবায়ুর প্রভাবে হাঁসফাঁস করছি অন্যদিকে পরিবেশবিরোধী কাজও চলমান রাখছি। জীবন-জীবিকায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আবার ফিরতে হবে প্রকৃতির মতো করে প্রকৃতির কাছে।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিল মো. মোমিন।
সারা পৃথিবীজুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ সংকট। মানবসৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। ফলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (CRI) অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি,সমুদ্রগর্ভে ভূখণ্ড বিলীন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীর গতিপথ পরিবর্তন,অতি বৃষ্টি, অতি বন্যা, অতি খরা, অতি শৈত্য, অনাবৃষ্টি, চর সৃষ্টি, নদী ভাঙন, পানির স্তর নিম্নগামী, এসিড বৃষ্টি প্রভৃতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনরোধে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ করাসহ প্লাস্টিকপণ্য বর্জন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, কয়লা-জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরিত হয় (গ্রিল, কাবাব) এমন খাদ্য বর্জনসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ব্যবহার (যেমন: সাইকেল) ও পায়ে হেঁটে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেশি বেশি গাছ লাগানো। এর বিকল্প দ্বিতীয়টি নেই। নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের উচিত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশ বিপর্যয়গুলো মোকাবিলা করা। আসুন সোচ্চার হই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাসের হাত থেকে বাঁচি।
অর্পিতা রায় শাওন
শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পরিবেশ সংকটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা এখন ভীষণ লক্ষ্য করছি। অনেকগুলো প্রভাবের মনে বর্তমানে অন্যতম একটি হলো বজ্রপাত। পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এটায় যেভাবে একের পর এক মৃত্যুসহ ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে, তাতে পরিস্থিতি এমন যেন এটি একটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।
বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাছপালা কমে যাওয়া ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই বৃদ্ধি জলবায়ুগত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের ফল তা সহজেই বলা যায়।
বজ্রপাতের ঘটনা প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে তালগাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু যদি ও এ ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ। এখন কৃষকদের সচেতন করা এবং এলাকায় বড় বড় গাছগুলোকে সংরক্ষণ করা। এই দুর্যোগে প্রাণনাশের ঝুঁকি লাগব করবে।
বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে জনগণকেও। ঝড়-বৃষ্টির সময় বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।
মো. সাইজুদ্দিন (সাজু )
শিক্ষার্থী, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এবারের মতো এত বেশি তাপমাত্রা আমরা কেউই দেখিনি। অতিবৃষ্টি, খরাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করছি যা ছোটবেলায় আমরা দেখিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের ভাবাচ্ছে এখন। আগে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ এ পরিবেশ নিয়ে বেশি কথা হতো। আর এখন প্রতিমুহূর্তই প্রকৃতি মনে করিয়ে দেয় যে একটি সুস্থ, সুন্দর ও উপযোগী পরিবেশ আমাদের জন্য কতটা জরুরি। মনে করিয়ে দেয় পরিবেশের জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা কতটা!
একটি গাছ বাতাস থেকে প্রায় ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে
এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আর যেখানে গাছ বেশি
থাকে সেখানে বৃষ্টিও বেশি হয়। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ঔষধ বানাই। ফুল গাছ থেকে আমরা আমাদের
আঙিনার সৌন্দর্য বাড়াই; রং-বে রঙের ফুলের মাধ্যমে আমাদের হৃদয়কে রাঙিয়ে নেই। পৃথিবীর
পরিবেশ বসবাস উপযোগী থাকা ও মানুষের জীবন ধারণের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে এই গাছ।
আর ইসলামও গাছ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ বজায় রাখার প্রতি অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে।
এ পৃথিবী আমাদের। আমরাসহ আমাদের প্রজন্ম এখানেই বেড়ে উঠছে। আমাদের উচিত; আমরা যে পৃথিবীটা পেয়েছি, আমাদের আগামী প্রজন্মকে এর চেয়ে সুস্থ, সুন্দর, চমৎকার ও উপযোগী পরিবেশময় পৃথিবী উপহার দেওয়া।আর সুস্থ, সুন্দর, চমৎকার ও উপযোগী পরিবেশময় পৃথিবী করতে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে দায়মুক্ত হতে, আমাদেরকে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাই এই "বিশ্ব পরিবেশ" দিবস উপলক্ষে গাছের মত শ্রেষ্ঠ সম্পদকে আরো বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে, গাছ বেশি বেশি রোপণ করে উপযোগী পরিবেশ তৈরী করি ও রক্ষা করি। আর তার ধারাবাহিকতা সব সময়ই বজায় রাখি।
মো. হুসাইন আহমদ
শিক্ষার্থী, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল।
প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা এবং নতুন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে রাষ্ট্র সংঘ এই দিবস পালন করে। সুরক্ষিত পরিবেশ আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বর্তমান করোনা মহামারী থেকে বোঝা যায়।
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে গঠিত হয় পরিবেশ। পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে মানুষের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত চাহিদা পূরন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিভিন্নভাবে চাপ পড়ে। বিভিন্ন কারনে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির উপর অত্যধিক চাপের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের দ্বারা প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়।
পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারন হচ্ছে অতীত ও বর্তমান প্রজন্ম যে পরিমান গাছের দ্রুত ক্ষতিসাধন করছে, পরিবেশ সে পরিমান ক্ষতিপূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের নাম করে যখন গাছ কেটে ফেলা হয়, ক্ষমতাশীল লোকেরা যখন নদী দখল করে ভরাট করে ফেলে, পাহাড়ের টিলা কেটে সমান করে ফেলে, শিল্পোন্নয়নের নামে শিল্প বর্জ্য যখন সাধারণ নর্দমা, খাল এবং নদীতে ফেলে দেওয়া হয় তখনই পরিবেশ দূষণ মাত্রাতিরিক্ত হয়।
পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে।
পরিবেশকে সুন্দর রাখতে গ্রামীণ পরিবেশের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, গাছ লাগাতে হবে এবং জনগণকে আরোও বেশি সচেতন হতে হবে। যদি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নিজেই নিজের দায়িত্ব পালন করে তাহলে পরিবেশ হবে সুরক্ষিত এবং ধরণী থাকবে সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা।
ইশরাত জাহান শাফা
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
পরিবেশ মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে মানুষ পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বাসোপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলেছে।পরিবেশই প্রাণের ধারক,জীবনী শক্তির যোগানদাতা। সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশের উপরই প্রাণীকুলের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। কিন্তু এই পরিবেশ যখন বিপন্ন ও প্রতিকূল হয় তখন জীবের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
চারিদিকে আজ পরিবেশ দূষণের মহোৎসব। জলে, বাতাসে, মাটিতে সর্বত্র দূষণের মহাত্রাস।শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে পরিবেশ ক্রমশ দূষিত হচ্ছে। নির্বিচারে বনায়ন উজাড় করা হচ্ছে ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যত্রতত্র কল-কারখানা নির্মাণের কারণে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। কীটনাশক, বর্জ্য পদার্থ পানিতে মিশে বিষাক্ত রূপ ধারণ করছে। মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন পদার্থ জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সুতরাং পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ গুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনে টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সচেতনতা অবলম্বনের বিকল্প নাই এবং বিশ্ব পরিবেশ দিবসের স্লোগান সামনে রেখে সবাইকে পরিবেশ রক্ষার্থে এগিয়ে আসতে হবে তাহলে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।
ফাতেমা সাদিয়া ঐশী
শিক্ষার্থী, সমাজ কল্যাণ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মন্তব্য করুন