বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফজলুর মতো চ্যালেঞ্জিং মানুষকেও ঠিকানা খুঁজে দিলো ‘আপন ঠিকানা’

রিজুয়ানা রিন্তী
১৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৭ |আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৩
‘আপন ঠিকানা’য় মা-বাবাকে খুঁজতে আসেন ফজলু। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া
‘আপন ঠিকানা’য় মা-বাবাকে খুঁজতে আসেন ফজলু। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

খুব কম বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল ফজলু। মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাবা। সৎ মা দেখতে পারতেন না ফজলুকে। সৎ মায়ের ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। এরপর হারিয়ে গেছেন। হেঁটে, বাসে, ট্রেনে, আবার হাঁটতে হাঁটতে সিলেট শাহজালাল মাজারে গিয়েছিলেন ফজলু। এরপর থেকে ওই এলাকাতেই আছেন তিনি।

আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের সৌজন্যে আরজে কিবরিয়ার উপস্থাপনায় স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’র ৭৬তম পর্বে গত ৮ অক্টোবর অতিথি হয়ে এসে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা মনে করার চেষ্টা করেন ফজলু। ফিরে পেতেন চান নিজের ‘আপন ঠিকানা’। ফজলু ফেসবুক-ইউটিউব জানেন না, তিনি শুধু জানেন ‘আপন ঠিকানা’ বাবা-মা খুঁজে দেয়। তাই তিনি এসেছেন তার গর্ভধারিণী মায়ের খোঁজে। কিন্তু তার মানসিক বিকাশ অন্য সবার মতো নয়। এটাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ফজলুর আপডেট ভিডিওতে মিশে আছে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা আর প্রচেষ্টা। তার প্রায় ১৬ মিনিটের বেসিক ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ৫৯ হাজার। ভিডিওতে কমেন্ট করেছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সবাই চেয়েছেন ফজলু ফিরে যাক তার ‘আপন ঠিকানা’য়।

আরও পড়ুন- পাশের বাড়ির মানুষটিই হতে পারে ‘রোল মডেল’

বেসিক ভিডিওতে ফজলু জানিয়েছিলেন তার বাবার নাম মফিজ আলী। তিনি কৃষিকাজ করতেন। মায়ের নাম হাজেরা বেগম হতে পারে। ঠিকানা শুধুমাত্র মনে ছিল কাজীটুলা তার বাড়ি। তার চার ভাইবোনের মধ্যে বড়ভাই কাজল, সে নিজে ফজলু এবং দুই বোন রাবেয়া ও রহিমার কথা মনে আছে।

এতটুকু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করে ‘আপন ঠিকানা’ টিম। আপন ঠিকানার ফলোয়ার এবং সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রচেষ্টায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯০ শতাংশ তথ্য মিলে যাওয়া একটি পরিবারকে স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বড় ভাই কাজল মিয়া ফজলুকে ভাই দাবি করেই সিলেট থেকে স্টুডিওতে আসেন। তারা ট্রেনে করে বুধবার সকাল ৬টায় ঢাকায় পৌঁছালে আপন ঠিকানার আনঅফিসিয়াল ভলান্টিয়ারদের একজন অতিসাধারণ এই মানুষদের জন্য হোটেলে রুম ভাড়া করে বিশ্রাম ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। অপরদিকে ফজলুও আগেরদিন তিনবার ট্রেন মিস করে পরদিন সকালের ট্রেনে ঢাকায় এসে পৌঁছান।

আরও পড়ুন - জাহানারার প্রাপ্তিতে সফল হলো ‘আপন ঠিকানার ৫০তম পর্ব

ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, প্রথম সোর্সের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন আর জে কিবরিয়া। এরপর অন্যান্য সোর্স, ভলান্টিয়ারদের কাছ থেকেও বিস্তারিত জেনে নেন।

স্টুডিওতে ফজলু জানান, একজনের কথায় তিন হাজার টাকা দিয়ে মা-বাবাকে খোঁজার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। পরিবারের সবার চেহারা তার মনে আছে। কেউ সামনে আসলে হয়তো চিনতে পারবেন।

এরপরই বড় ভাই দাবি করা কাজল রুমে ঢুকলে তাকে দেখে চিনতে পারেননি ফজলু। সিলেটের ভাষায় কাজল ফজলুকে ছোটবেলার অনেক কিছু মনে করানোর চেষ্টা করেন। ফজলু সম্মতি সূচক জ্বী অয় জ্বী অয় বলেছেন। কিন্তু পরক্ষণেই বলছেন কিছুই মনে পড়ছে না তার।

ফজলু বলছিল, তার বাবা দেখতে লম্বা-সুন্দর ছিল। আর মাও সুন্দর ছিলেন। কাজলের বর্ণনায় তার বাবা-ভাই বোনের পরিচয় মিললেও জায়গার নামটা মেলেনি। প্রায় ৯০ শতাংশ তথ্য মিলে গেলেও কাজলকে বড় ভাই হিসেবে চিনতে না পারা ফজলুর চোখে মুখে ছিল সংশয়। তিনি আরেকটু চেষ্টা করে দেখতে চান।

অনুষ্ঠানে আরজে কিবরিয়া ফজলুর মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে বিষয়টা পেন্ডিং রাখলেন।

এরপর সবাইকে ডেকে আরজে কিবরিয়া বলেন, ‘ফজলু ভাই তার ভাইকে চেনেননি। সব তথ্য মিলেছে, বড় ভাই কাজলও অনেক তথ্য মনে করানোর চেষ্টা করেছেন, ফজলু সম্মতি সূচক জ্বী অয় জ্বী অয় বলেছেন। কিন্তু এটা কনফিডেন্টলি লাগেনি আমার কাছে। ওর যে ধরনের মানসিক গড়ন, একটু চ্যালেঞ্জিং ওর জন্য। তবে আলহামদুল্লিলাহ প্রায় ৯০ শতাংশ মিলে গেছে, এরকম একটা পরিবার আমরা পেয়েছি। শুধুমাত্র কাজীরগাও ও কাজীটুলা মেলেনি। মায়ের নাম মেলেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপন ঠিকানা সাধারণত তিনটা জিনিস করে। ফ্যামিলি আসার পরে, আমরা সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেই যিনি ভিকটিম বা অতিথি তার ওপর। হয় তিনি অ্যাকসেপ্ট করবেন বা করবেন না বা তিনি সময় নেবেন। ফজলু সময় নিয়েছেন। এখন তিনি গ্রামে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে দেখে শুনে এটা তার পরিবার বা পরিবার না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এ সময় ফজলুর শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সঙ্গে আসা ব্যক্তিকে আরজে কিবরিয়া অনুরোধ করেন যাতে ফজলুকে তার সম্ভাব্য বাড়িতে একা না পাঠানো হয়, যাতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে।

এই সিদ্ধান্তকে ফজলু সম্মতি দিয়ে বলেছেন ‘বালা করছুইন’।

এ সময় কিবরিয়া বলেন, ‘ফজলুর কথা বলার ধরন বা সমস্ত কিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছিল হয়তো চিনতে পারবেন না। ওর যে ধরনের প্রকাশ ভঙ্গি, ওর কাছে বেশি এক্সপেক্ট করা ঠিক হবে না। সে খুব সহজ সরল মানুষ। তার প্রতি বেসিক ভিডিওতে আমরা যে আন্তরিকতা দেখিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ ৫০ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। ফজলুর পরিবারের বিস্তারিত ঠিকানা, সে এখন কোথায় থাকে, ফজলুকে যারা দাবি করেছেন তারা কোথা থেকে এসেছেন, সমস্ত কিছু তুলে ধরা হয়েছে। বাকিটুকু আল্লাহ ভরসা, সে যদি চিনতে পারে। ফজলু যদি নাও মানে তাতে কোনো সমস্যা নেই, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। ফজলুর কাছ থেকে স্টেটমেন্ট আসার আগ পর্যন্ত এই পর্বের রেজাল্ট পেন্ডিং থাকলো। ইনশাআল্লাহ হয়তো ভালো রেজাল্ট আসবে।’

আরও পড়ুন - জাহানারার প্রাপ্তিতে সফল হলো ‘আপন ঠিকানার ৫০তম পর্ব




মন্তব্য করুন