শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, শ্বশুর গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
২৬ অক্টোবর ২০২১ ১৭:২৫ |আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:১৮
গৃহবধূ উর্মি খাতুনের মরদেহ
গৃহবধূ উর্মি খাতুনের মরদেহ

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূর নাম উর্মি খাতুন (১৮)। তিনি নগরঘাটা এলাকার মো. ইমরান হোসেনের স্ত্রী ও ভারশা গ্রামের নজরুল সরদারের মেয়ে। এই ঘটনায় পুলিশ শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও স্বামী ইমরান পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোরব) বেলা ১১টার দিকে পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামে।

নিহতের দাদা আকবর সরদার জানান, ৮ মাস আগে নগরঘাটা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে ইমরানের সাথে বিয়ে হয় ভারশা গ্রামের নজরুল সরদারে মেয়ে উর্মির। বিয়ের পর থেকে প্রায় নির্যাতন করত তাকে ইমরান। ১৫ দিন আগে পারিবারিক কলহের জের ধরে বাবার বাড়িতে ফিরে আসে উর্মি। ৫/৬ দিন আগে ইমরানের মা ও মামারা আমাদের বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যায় আবার। আজ শুনি যে আত্মহত্যা করেছে।

উর্মির মামা হাফিজুর রহমান জানান, ইমরান মাস ছয়েক ধরে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকদিন ধরে মোটরসাইকেল বিক্রি করতে চাইছিল সে, এতে বাধা দেওয়ায় প্রায়ই মারধর করত উর্মিকে। মঙ্গলবার সকালে সে উর্মিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে থাকে। আমরা ঘটনাটি জানার পর পুলিশকে জানাই, অতপর পুলিশ এসে লাশ নিয়ে থানায় যায়। আমরা ইতিমধ্যে তিনজনের নামে থানায় মামলা করেছি।

নিহতের শ্বশুর তরিকুল ইসলাম জানান, আজ সকালে আমি বাড়ি থেকে রাজমিস্ত্রি কাজের জন্য বেরিয়ে আসি। এরপর নগরঘাটার রাইচমিল এলাকায় কাজ করতে থাকি। বেলা ১১টার দিকে আমার ভাই আমাকে মোবাইলে ফোনে বলে আমার বৌমা আত্মহত্যা করছে। আমি বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানাই। তিনি আমাকে থানায় গিয়ে পুলিশকে জানতে বলে। অতপর থানায় আসলে জানতে পারি মেয়ের বাবা আমার নামে থানায় মামলা করেছে। আমি নিরপরাধ, তারা আমায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

নগরঘাটা ইউপি সদস্য সরোয়ার হোসনে জানান, বিষয়টি যতদূর শুনেছি এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক ও পারিবারিক কলহের জেরের কারণ এটি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ সমাদ্দার জানান, লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোট শেষে হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি স্পষ্টভাবে বলা যাবে।

নিহতের শ্বশুর বাড়ির এলাকার স্থানীয়রা জানায়, সাত থেকে আট মাস ইমরানের মা শাহিদা খাতুন তার ছেলেকে নিয়ে সবার অগোচরে ইমরানের সাথে ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ে দিয়ে ইমরানের মা বাড়ি থেকে চলে যায়। ইমরানের মা যৌতুকের জন্য বারবার তার বৌমাকে চাপ দিতে থাকে। এজন্য ইমরান প্রতিনিয়ত তার স্ত্রীকে মারধর করে। মূলত ইমরান তার মার কথা মতো তার তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতে থাকে।

পাটকেলঘাটা থানা পরিদর্শকক আলহজ্জ্ব নাজমুল হুদা জানায়, এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিহতের শ্বশুর তরিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।



মন্তব্য করুন