বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসুন্ধরার এমডিকে হত্যাচেষ্টা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
৯ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩২ |আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২১ ১২:০২
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার পরিকল্পনার মতো ঘটনা দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য হুমকি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ী সমাজ মনে করে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যথায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এছাড়া ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এ বিষয়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। 

তিনি এ ঘটনার পেছনে কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয় এর পেছনে যে ব্যক্তিরা জড়িত থাকতে পারে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপর এ ধরনের হত্যাচেষ্টা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এর আগে ঢাকা বোট ক্লাবে নায়িকা পরিমনি কাণ্ডকে কেন্দ্র করে আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদকে হয়রানি করা হয়। হয়রানিমূলক মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় একজন অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছে। তিনি স্বীকারোক্তিতে ঘটনার পেছনের ক্রীড়নকদের নামও বলেছেন। কিন্তু এখনও আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। এর ফলে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সারাদেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। একই সঙ্গে নিজেদের করা বিনিয়োগ নিয়েও অনেকেই শঙ্কিত। এজন্য সরকারের কাছে নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। তারা বলেছেন, এ ঘটনার দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান হওয়া জরুরি।

তবে এ দেশে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এমন কি ২০০৭ সালে ১/১১ এর সময়ও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছিল। সেসময় তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক বিপুল পরিমাণ টাকাও আদায় করা হয়েছিল। যা আজ পর্যন্ত ফেরত পাননি ব্যবসায়ীরা। যদিও তার পরবর্তী সময়ের সরকাররা টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে একাধিকবার।

সেসময় অন্যায়ভাবে জেলে নেওয়া হয়েছিল অসংখ্য শীর্ষ ব্যবসায়ীকে। ফলে তখন স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। তবে এখন তারা আর শুধু হয়রানিতেই থেমে নেই। একটি কুচক্রী মহল সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে রাষ্ট্রেরই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আড়ালে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে ব্যবসায়ীদের হত্যার পরিকল্পনা করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আবারও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মহামারি করোনা ভাইরাসের আঘাতে এমনিতেই সারা বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। করোনা অচলবস্থার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আর এই মুহুর্তে শুরু হয়েছে দেশবিরোধী কুচক্রী মহলের গভীর ষড়যন্ত্র। তারা ব্যবসায়ীদের হত্যার নীলনকশা এঁকেছে। যার মাধ্যমে মূলত দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকেই বাধাগ্রস্ত করতে চায় এই কুচক্রী মহল।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর)  জুমার নামাজের সময় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এদিনই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাউতুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে চট্টগ্রামের পটিয়ার এক যুবককে আটক করে রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ জানান, শুক্রবার (৫ নভেম্বর) পবিত্র জুমার নামাজ চলাকালে সায়েম সোবহান আনভীরকে গুলি করে হত্যার প্রস্তুতি ছিল তার। পটিয়ার সংসদ সদস্য (এমপি) হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার ছেলে নাজমুল করিম ওরফে শারুন চৌধুরীর নির্দেশে হত্যার এ পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন তিনি। তার আগে দুধের মধ্যে বিষ মিশিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে চক্রটি। এ ঘটনায় দেশের অন্য শীর্ষ ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সারাদেশেও চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি।

এর পেছনে কারা জড়িত খুঁজে বের করতে হবে:বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নীটওয়ার ম্যানুফেকচারা অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হত্যার পরিকল্পনা ঘটনা ব্যবসায়ী সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমার মনে হয় এর পেছনে অন্য কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে। যারাই জড়িত থাকুক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব। ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তা না থাকলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে হলেও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশ জুড়ে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছেন। দেশের অর্থনীতির বিকাশে অসামান্য অবদান রাখছে। আর সেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে হত্যার হুমকি দেওয়া বা হত্যার পরিকল্পনা করা তো ছোট খাটো কোনো মাস্তানের কাজ নয়। নিশ্চই এর পেছনে বড় চক্র জড়িত থাকতে পারে। আমি মনে করি জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে।

জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে : বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের যে কোনো উপায়ে খুঁজে বের করতে হবে। কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বসুন্ধরা গ্রুপ সারাদেশে ৫০-৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টিও বেশি। এ ধরনের বড় একটি শিল্পগোষ্ঠীর কর্নধারকে হত্যার হুমকি দেওয়া কিংবা হত্যার পরিকল্পনা করা নিশ্চই ছোট খাট কোনো মাস্তানের কাজ নয়। এর পেছনে হয়তো প্রভাবশালী কোনো গোষ্ঠীই জড়িত থাকতে পারে। সরকারের উচিত হবে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। সর্বোপরি ব্যবসায়ী সমাজকে নিরাপত্তা দেওয়াও সরকারেরই দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের তীব্র নিন্দা:

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। 

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপর এ ধরনের হত্যা প্রচেষ্টা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। চেম্বার সভাপতি হিসেবে আমি এটা সমর্থন করি না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি আরও বলবো এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ী সমাজের ক্ষোভ, হতাশা আরও গভীর হবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।



মন্তব্য করুন