শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বোয়ালমারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

ফরিদপুর প্রতিনিধি
৯ নভেম্বর ২০২১ ১৩:১৭ |আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২১ ১৩:২১
বোয়ালমারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
বোয়ালমারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকদের অনুমোদিত ১১টি পদের মধ্যে ৬টিই শূন্য।

ধার করা শিক্ষক নিয়ে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে স্কুলটির পাঠদান কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাবে জানিয়েও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার দক্ষিণ শিবপুর মহল্লায় প্রায় দেড় একর জমির ওপর ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকদের মোট পদ ছিল ১১টি। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদ ছিল ৪টি।

বর্তমানে এখানে শিক্ষক কর্মরত আছেন মাত্র পাঁচজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে শূন্য, আর সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ২০১৯ সালে ১৭ জুলাই থেকে। এ ছাড়া গণিত, ইংরেজি, বাংলা ও ধর্ম বিষয়ের একজন করে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এঁদের মধ্যে ইংরেজি ও ধর্মের শিক্ষক যথাক্রমে ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি ও একই বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে নেই। আর গণিতের শিক্ষক ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে এবং বাংলা বিষয়ের সহকারীর শিক্ষকের পদটি ২০১৯ সালের ২৫ জুন থেকে খালি। পরিস্থিতি সামাল দিতে চারজন অতিথি শিক্ষক নিয়ে কোনো রকমে পাঠদান চালু রাখা হয়েছে।

আরও জানা যায়, বিদ্যালয়টির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের চারটি পদের মধ্যে বর্তমানে শুধু একজন দারোয়ান কর্মরত রয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির অফিস সহকারীর পদটি ২০১৫ সালের ১১ মে থেকে, চতুর্থ শ্রেণির নৈশপ্রহরীর পদ ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি এবং দপ্তরির পদ ২০২১ সালের এক জানুয়ারি থেকে শূন্য।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ে তিনতলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া একই চত্বরে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ছয়তলার এই ভবনটি উপজেলার জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সমন্বিত কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বাকি সময় এই ভবনে চলবে বিদ্যালয়ের পাঠদান। মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র এই উচ্চবিদ্যালয়টির ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫৫।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মিম, মারিয়া বিনতে মিরাজ ও লিমা জানিয়েছে, শিক্ষকের অভাবে তাদের উচ্চতর গণিতের ক্লাস কখনোই হয় না। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরিকা আক্তার ও রেবা ইসলামের ভাষ্যমতে, শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।

এদিকে, অতিথি শিক্ষক মো. রইচ উদ্দিন জানান, সারা মাস পাঠদান শেষে বিদ্যালয় থেকে তাঁদের মাত্র দুই হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে যা বেমানান এবং অমানবিকও বটে।

অন্যদিকে, স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম চুন্নু মিয়া জানান, শিক্ষককর্মচারী সংকটের বিষয়টি গত ২৫ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালককে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য ২ হাজার ৬০০ জন সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ ওই তালিকা থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের শূন্য পদে শিক্ষক পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে বিদ্যালয়ের তহবিল সংকটের কারণে অতিথি শিক্ষকদের সম্মানী বাড়ানো যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম জানান, ইংরেজি ও গণিতের শিক্ষকদের প্রাইভেট-টিউশনির ওপর ঝোঁক বেশি। এ জন্য তাঁরা মফস্বলে না থেকে তদবির করে শহরের স্কুলগুলোতে বদলি হন। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাউশিতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।



মন্তব্য করুন