বুধবার, ৮ মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩২ বছরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৫৫ |আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১ ১৩:০৭
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই।

১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। আজ সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের ৩২ বছর পূর্ণ করলো।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বপ্রথম ছাত্র রাজনীতিমুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা, হানাহানির মতো ঘটনা ঘটেনি, কোনো শিক্ষার্থী আহত বা নিহত হয়নি। সম্প্রতি গবেষণাভিত্তিক র‍্যাংকিংগুলোতেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

গত ৩২ বছরে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সংকট আর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

আবাসন সংকট: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পান মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী। বাকি হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া দিয়েই থাকতে হয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেসগুলোতে। ছোট্ট একটি রুমের আকাশচুম্বী ভাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝাস্বরূপ। সম্প্রতি মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের পাঁচতলা ও ছয়তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

টিএসসি, জিমনেসিয়াম: ৩২ বছরে পা রাখলেও ক্যাম্পাসে নেই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি। নামমাত্র একটি জিমনেসিয়াম থাকলেও সেখানে অযত্নে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। ফিটনেস সেন্টার হিসেবে পরে থাকা অব্যবহৃত ভবনটিকে ক্যাম্পাসের সবথেকে বড় অব্যবস্থাপনা হিসেবে দেখছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ টিএসসি ও জিমনেসিয়াম তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

ক্লাসরুম সংকট: শিক্ষার্থীদের অভিযোগের একটা বড় জায়গা ক্লাসরুম সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, আইন ডিসিপ্লিন এবং হিউম্যান রিসোর্স ও ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ক্লাসরুম সংকট রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের স্নাতক ৪টি ও স্নাতকোত্তর ১টি ব্যাচ এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের স্নাতক পর্যায়ে ৪টি ব্যাচের জন্যে ক্লাসরুম রয়েছে মাত্র দুটি করে।

ল্যাব সংকট: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের জন্যে দুটি ল্যাব রয়েছে। যার মধ্যে ডাটা এনালাইসিস ল্যাবের অধিকাংশ কম্পিউটার নষ্ট। যে কয়টি কম্পিউটার চলছে সেগুলোতে আবার শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ভারী সফটওয়্যার চলছে না। এর ফলে একটি ল্যাব ব্যবহার করে স্নাতক ৪টি ব্যাচের ল্যাব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। বিষয়টি স্বীকার করে পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. উত্তম কুমার মজুমদার জানান, ল্যাবটি বেশ পুরনো। এর কম্পিউটারগুলো তাই আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার যোগ্য না। আমরা সাময়িকভাবে ঠিক করার কাজ করছি। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন আগামী অর্থ বাজেটে নতুন কম্পিউটার ক্রয় করার অনুদান প্রদান করবেন।

এত সীমাবদ্ধতার পরও জ্ঞান-প্রজ্ঞা আর সম্প্রীতির সমন্বয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক প্রতিটি শিক্ষার্থী এমনটাই চাওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. খান গোলাম কুদ্দুসের।

এভাবেই রঙিন এ আলোকচ্ছটায় রাতের আবহে হাজারো বছর গৌরব আর অর্জনে জ্বলজ্বল করুক প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় এমনটাই প্রত্যাশা সবার।



মন্তব্য করুন