শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অটোরাইস মিলের দাপটে হাস্কিং মিলের শ্রমিকদের পেশা বদল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৩৮ |আপডেট : ৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১২
চালকল
চালকল

ঠাকুরগাঁওয়ে অটোরাইস মিলের দাপটে টিকতে না পেরে শত শত হাস্কিং মিল (চালকল) বন্ধ হয়ে গেছে। টানা লোকসানের কারণে অনেক মালিক মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে চাতাল কল ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। জীবিকার তাগিদে পেশাও বদল করেছেন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা।

জেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৪২৫টি চালকল ছিল, যেখানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। বর্তমানে এসব হাস্কিং মিলের পাশাপাশি চালু রয়েছে ২২টি অটোরাইস মিল। এগুলো পুরোদমে চালু থাকলেও হাস্কিং মিল টিকে আছে মাত্র ৫০টি, যেগুলোর অবস্থা নাজুক।

জেলায় কয়েকটি হাস্কিং মিলে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মিলগুলো বন্ধ থাকায় চাতালে ঘাস গজিয়েছে, ভেঙে পড়েছে চিমনি। বছরের পর বছর অব্যবহৃত থাকায় ঝোপে পরিণত হয়েছে চাতাল। নষ্ট হচ্ছে মিলের মূল্যবান যন্ত্র।

রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজারের চালকলের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে শুধু সরকারি বরাদ্দের চাল উৎপাদনের জন্য বছরে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিন মিল চালু করি। এ ছাড়া সারা বছরই মিল বন্ধ থাকে। আমার মতো সিংহভাগ হাস্কিং মিলের একই অবস্থা।

মেসার্স ভাইভাই চালকলের মালিক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়। আর অটোরাইস মিলে এক-দুদিনের মধ্যে চাল উৎপাদন করে বাজারজাত করে এবং তাঁরা দাম পায়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় নয়।

হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী এলাকার মেসার্স নুর ইসলাম চালকলের মালিক আবু সায়েদ জানান, অটোরাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে তাঁদের মতো ছোট ছোট চালকল মালিক পুঁজি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে লোকসান ঠেকাতে তাঁরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

মেসার্স নুর ইসলাম চালকলে কর্মরত নারী শ্রমিক করিমন নেছা, ভেউলা রানী, আসমা খাতুন বলেন, এ মিলে একসময় অনেক মানুষ কাজ করতেন। এখন চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই যারা আগে মিলে কাজ করতেন, তাঁরা এখন পেশা বদল করেছেন। আমরা অন্য কোনো কাজ পারি না। তাই বাধ্য হয়েই চাতালে পড়ে আছি।

এ বিষয়ে জেলা চালকলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাছান রাজু বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ হাস্কিং মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতে পারছেন না অনেক চালকলমালিক। ব্যাংকঋণ শোধ করতে না পারায় কোনো কোনো চালকলমালিকের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা হয়েছে। এর মূল কারণ সরকার অটোরাইস মিলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যার কারণে হাস্কিং মিল সরকারকে চাল দিতে পারছে না। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে চালকলগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মাহমুদ হাছান আরও বলেন, ৩০০টি হাস্কিং মিলের সমান কাজ করে একেকটি অটোরাইস মিল। বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে সচল করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ বরাদ্দ ও ভর্তুকির মাধ্যমে মিলগুলোকে আধুনিক মেশিনারিজ দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর