করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধের অংশ হিসেবে দেশে বয়স্কদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এবারে তিনি জানালেন, পরীক্ষামূলকভাবে বুস্টার ডোজের প্রয়োগ শুরু হবে আগামী রোববার।

আজ শুক্রবার বিকেলে ৫টার দিকে মন্ত্রী সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী রোববার থেকে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল বেসিসে) ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দিতে শুরু করব। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

জানতে চাইলে একই তথ্য জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হকও। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত ভ্যাকসিন কর্মসূচি চলছে। এর পাশাপাশিই রোববার থেকে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হবে। শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।’

এদিকে, সারাবাংলার মানিকগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রিপন আনসারী জানিয়েছেন, এদিন মানিকগঞ্জ শুভ্র সেন্টারে পিঠা-পুলি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সেখানে তিনি বলেন, বয়স্ক মানুষ ছাড়াও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে যেসব চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকেরা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী রবি বা সোমবার থেকে বুস্টার ডোজের ট্রায়াল শুরু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমানে বুস্টার ডোজের জন্য সুরক্ষা অ্যাপ আপডেটের কার্যক্রম চলছে।

দেশে ভ্যাকসিনের অভাব নেই জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সাত কোটি নাগরিককে এক ডোজ এবং সাড়ে চার কোটি নাগনিককে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তারপরও দেশে এখন ফাইজারের সাত লাখ ডোজ ভ্যাকসিন হাতে আছে। আগামী মাসে আরও দুই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। সব ভ্যাকসিন মিলিয়ে দেশে এখন পৌনে পাঁচ কোটি ভ্যাকসিন রয়েছে।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত বুস্টার ডোজ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে দু’জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। তবে এর আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বয়স্কদের সুরক্ষা দিতে ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীও ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বুস্টার ডোজ নিয়ে অবশ্য কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি ও ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির (নাইট্যাগ) মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নাইট্যাগ বলছে, দেশের সব নাগরিকদের ২ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার আগেই এরই মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে বৈষম্য তৈরি হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া গেলেও ভ্যাকসিন না পাওয়া ব্যক্তিরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।

তবে বিপরীত মতামত জানিয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটি বলছে, ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের যারা ২ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পেয়েছেন, বুস্টার ডোজ না দেওয়া গেলে ভ্যাকসিন না পাওয়া নাগরিকদের পাশাপাশি তারাও ঝুঁকিতে থাকবেন। বুস্টার ডোজ দিয়ে তাদের এই ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।