মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলক্রসিং নিরাপদ হওয়া জরুরি

সামছুল আলম সাদ্দাম
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৪০ |আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৫৫
সামছুল আলম সাদ্দাম। লেখক ও সাংবাদিক
সামছুল আলম সাদ্দাম। লেখক ও সাংবাদিক

অরক্ষিত ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে চলেছে। অথচ এগুলো সুরক্ষিত করার কোনো তাগিদ নেই। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের খুলশীর ঝাউতলায় লেভেল ক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, সিএনজি ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যুসহ ১০ জন গুরুতর আহত হন। সেখানে গেটম্যান থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৫টি দুর্ঘটনায় ৫০-৫৫ জনের অধিক মানুষ মারা গেছেন এবং শতাধিক আহত হন। বাংলাদেশের রেলপথগুলো কতটা অরক্ষিত এবং এর নিরাপত্তাব্যবস্থা যে কত ঠুনকো, তার এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত হলো এসব দুর্ঘটনা। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় হাজারজন মানুষ মারা গেছেন। তার মধ্যে শুধু লেভেল ক্রসিংয়েই মৃত্যু হয়েছে ৬৫০ জনের। কী ভয়াবহ পরিসংখ্যান! এমন মৃত্যু কখনো কাম্য নয়। তারপর নিয়তির কাছে আমাদের হার মানতে হচ্ছে।

রেলসূত্র বলছে, সারাদেশে রেল নেটওয়ার্কে সর্বমোট ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। এর মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রেলের স্থায়ী রক্ষী রয়েছে, আর ৮২০টিতে রয়েছে চুক্তিভিত্তিক রেলরক্ষী, যা মাত্র ৩১ শতাংশ। রক্ষীবিহীন ক্রসিং আছে ১ হাজার ৭৯৪টি অর্থাৎ ৬৯ শতাংশ ক্রসিংয়ে রক্ষী নেই আর অনুমোদনহীন ক্রসিং ৬২ শতাংশ। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত। এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।

এটাই যখন বাস্তবতা, তখন রেল কর্তৃপক্ষের করণীয় কী? দেশে রেলপথে রেলক্রসিং স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার দায় আইনত কোন কর্তৃপক্ষের? বর্তমান বাস্তবতায় তাদের ভূমিকা কী? রেল সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বহু প্রকল্প গ্রহণের কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু রেলের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা রেলক্রসিং সুরক্ষিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন?

আর অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা এগুলো স্থাপিত হয়। কিন্তু এগুলোতে অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ হয়ে তো থাকতে পারে না। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথাও শোনা যায়। অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে আইন কী বলছে তা আমরা জানি না। তবে না জেনেও আমরা বলতে পারি, এসব ক্রসিংকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

অবৈধ রেলক্রসিংগুলো আইনানুগভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে, নেহাত বন্ধ করা না গেলে যথাযথ অবকাঠামো ও গেটম্যান দিয়ে এগুলো সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রেলগেট মরণফাঁদ হয়েই থাকবে, যা আমাদের কারও কাম্য হতে পারে না। রেলে নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই যথাযথ গুরুত্বসহ দেখা দরকার।

 

সামছুল আলম সাদ্দাম

লেখক ও সাংবাদিক



মন্তব্য করুন