শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের অতিথি পাখির দেখা যাবে দেশের যেসব স্থানে

অনলাইন ডেস্ক
২ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৩৭ |আপডেট : ৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:০১
পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পাখিরা তাদের খাবারে সন্ধানে, প্রজনন এবং ছানাদের লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের খোঁজে হাজার হাজার মাইল উড়ে যায়। বাংলাদেশে অতিথি পাখিরা আসে মূলত উত্তর মেরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, মঙ্গোলিয়া এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে।

নিজেদের জায়গা থেকে তুলনামূলকভাবে কম শীতল হওয়ায় বাংলাদেশকে বেছে নেয় এই পরিযায়ী পাখিগুলো। এই অতিথি পাখিদের ভীড় করা দেশের কয়েকটি স্থানের তালিকা নিয়েই এবারের ফিচার।

ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকা

ঢাকার ভেতরে অতিথি পাখির দেখা মেলে পিলখানা, মিরপুর চিড়িয়াখানা ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী লেকে। তবে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ভীড় প্রাণ ভরে উপভোগ করতে হলে যেতে হবে ঢাকার নিকটে সাভার উপজেলায় অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়া নয়নাভিরাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৪ সালে ঘোষণা করা হয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে।

সিলেটের হাওড় এলাকায়

হাওড়, নদী ও পাহাড়ের সমৃদ্ধ সিলেটে অতিথি পাখিগুলো খুঁজে পায় পরম আশ্রয়। সিলেট বিভাগজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওড়, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাইল হাওড় ও পাত্রখোলা লেক, সুনামগঞ্চের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও রোয়া বিল-এ প্রতি বছরই মুখরিত হয়ে উঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

চট্টগ্রামের দ্বীপাঞ্চল

বন্দর শহর চট্টগ্রামের সন্দীপ, উড়ির চর ও চরণদ্বীপ অতিথিদের পাখি দেখার জনপ্রিয় জায়গা। এছাড়া বহুল পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত নোয়াখালী জেলার নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া দ্বীপ, চর ওসমান বা শাহেবানিচর, চর পিয়া, বয়ার চর ও চরভাটা।

পর্যটন শহর কক্সবাজারের মহেশখালী ও সোনাদিয়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যং-ও শীতের সময়টাতে ভরে ওঠে রঙ-বেরঙের অতিথি পাখিতে।

বরিশালের চরাঞ্চল

বৃহত্তর বরিশালের দুর্গাসাগর, ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি-মুকরি, ডাল চর, সুন্দরবনের দক্ষিণ উপকূল চরমানিক, কালকিনি বা চর নিজাম জায়গাগুলো লোকারণ্যে পরিপূর্ণ হলেও শীতের এ সময়টায় নাম না জানা হরেক রকম অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়।

পটুয়াখালী জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কুয়াকাটার পাশাপাশি খেপুপাড়া বা কলাপাড়া, চরমন্তাজ, সোনার চর, এমনকি আগুনমুখা নদী, গলাচিপা নদীতেও জলকেলি দেখা যায় অতিথি পাখির।

দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটর জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল এবং পঞ্চগড়ের ভিতরগড় ও পদ্মার চর-এ প্রতি শীতে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক। এছাড়া মধ্যাঞ্চলের নেত্রকোণার কলমকান্দার হাওর, কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর ও কলাদিয়াও বেশ সুপরিচিত অতিথি পাখি দর্শনের জন্য।

অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের স্বার্থে সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, প্রকৃতপক্ষে অভয়ারণ্য বলতে যা বুঝায় তা আজ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেনি। ১৯৭৪ সালের প্রণীত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী পাখি শিকার ও হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এরকম আইন থাকার পরেও বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে অতিথি পাখি। শুধু তাই নয়, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে অতিথি পাখিদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশকে প্রতিকূল করে তোলা হচ্ছে।

একশ্রেণির লোভী শিকারীর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রতি বছরই প্রাণ হারাচ্ছে হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখিগুলো। কখনো জালের ফাঁদ পেতে, কখনো বা বিষটোপ দিয়ে, আবার কখনো ছররা গুলি দিয়ে শিকার করে বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। এমনকি কেউ কেউ শখের বশেও ধরে চলেছে অতিথি পাখিদের।

ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে শীতে পাখি আসার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পর্যটকদের অনেকে পাখির খুব কাছে চলে যেয়ে চমকে দেয়। কেউ আবার দূর থেকে ঢিল মেরে আতঙ্কিত করে পাখি উড়ে যাবার দৃশ্য উপভোগ করতে চায়। এতে পাখির অবাধ বিচরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের হাতছানি আদিম ও অকৃত্রিম। কিন্তু সেই সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে গিয়ে তা নষ্ট করা উচিত নয়। অতিথি পাখি শুধু অপরূপ প্রকৃতির অংশ নয়; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই তাদের আশ্রয়স্থলকে বাঁচাতে অতিথি পাখির জন্য প্রণীত আইন কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে অতিথি পাখিদের বিচরণ স্থানগুলোতে বসবাসরত মানুষদেরও। সাথে সাথে যারা পরিদর্শনে যাচ্ছেন তাদেরও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে এই নৈসর্গিক বিস্ময়কে টিকিয়ে রাখার জন্য।



মন্তব্য করুন