শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক করলেন শিক্ষক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
১২ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০৩ |আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৩৫
হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়
হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়

সুনামগঞ্জে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শিক্ষকের সাথে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অশালীন ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক করেছেন শাহিন উদ্দিন (৫০) নামে এক শিক্ষক।

তিনি সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব উদ্দিন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে অশালীন ফোনলাপ ফাঁস হওয়ার কথা শুনে হার্ট অ্যাটাক করেছেন ওই শিক্ষক। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সাল থেকে হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন শাহিন উদ্দিন নামে ওই শিক্ষক। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে মোট ১২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর গোপন ফোনলাপ ভাইরাল করে।

ফোনলাপে শুনা যায়, ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে কুরুচিপূর্ণ নানা ইঙ্গিত করেন এবং টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন। ওই শিক্ষকের এমন কথাগুলো শিক্ষার্থী এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি বারবার তাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। এদিকে শিক্ষকের এমন কথা সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) হাজী লাল মামুদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহিন উদ্দিন (স্যার) গণিত খুব সুন্দর করে আমাদের বুঝিয়ে পড়াতেন। কিন্তু উনি কেন এমন করলেন আমরা বুঝতে পারছি না। একজন শিক্ষক হয়ে এত জঘন্যতম একটা অপরাধ তিনি কীভাবে করলেন! তবে আমরা শিক্ষার্থীরা দাবি জানাই, ভাইরাল হওয়া অডিওটি ভালো করে তদন্ত করে যে দোষী তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিদ্যালয়ের একজন গুণি শিক্ষক হয়ে তিনি যে কাণ্ড করেছেন সেটা খুব লজ্জাজনক। তবে আমার একটা দাবি সঠিক তদন্ত করে উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে এটা নিয়ে যাতে কেউ নোংরা রাজনীতে না করে সেদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নজর রাখা জন্য দাবি জানাই।

হাজী লাল মামুদ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শাহীন উদ্দিনের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে হাজী লাল মামুদ উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের বড়ঘাট এলাকায় বিদ্যালয়ের মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন অভিভাবক অ্যাড. আমিরুল হক, অ্যাড. শহীদুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আব্দুস ছুবহান, সাবেক ইউপি সদস্য আলী আহমদ, টুকেরবাজার আব্দুস সাত্তার এন্ড মরিয়ম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বাচ্চু, জানিগাঁও আলহাজ্ব জমিরুন নুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিন, এলাকাবাসী তফাজ্জুল হক সুমন, মইনুল ইসলাম, পুরান লক্ষণশ্রী গ্রামের ফারুক আহমদ ও শাহীন মিয়া, জগাইরগাঁও গ্রামের বশর মিয়া, অচিন্তপুর গ্রামের আমিনুল হক।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাজী লাল মামুদ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহীন উদ্দিনের এক শিক্ষার্থীর সাথে যৌন হয়রানিমূলক অডিও রেকর্ড স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় সুনামক্ষুণ্ন হয়েছে। এই অপরাধে শিক্ষক শাহীন উদ্দিনকে বিদ্যালয় থেকে চিরতরে বরখাস্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।

বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক বলেন, গত ২৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ে দুজন একসাথে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু তিনি কেন একজন মেয়ের বয়সী শিক্ষার্থী সাথে এমন করলেন বুঝতে পারছি না। তবে এই ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ তিন বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলে সকলের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে আজকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি আপনার মুখ থেকে ঘটনাটি এই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি আমার জানা ছিল না।

তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এবং তদন্তের মাধ্যমে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য করুন