শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থ পাচারকারীদের তালিকায় অনেক বাংলাদেশি

কেন তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরলেন খোকন

কৌশলী ইমা, যুক্তরাষ্ট্র
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:০৫ |আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৫৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস উপসচিব আশরাফুল আলম খোকন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস উপসচিব আশরাফুল আলম খোকন

র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারকারী সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিগগির নিষেধাজ্ঞা আসছে। অর্থ পাচারকারীদের তালিকায় প্রচুর বাংলাদেশির নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নাম। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার আভাস পেয়ে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস উপসচিব আশরাফুল আলম খোকন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে খোকনের দেশে পালিয়ে যাবার কথা।

সামাদ খান নামে গণ অধিকার পরিষদের একজন কর্মী গত ১৯ জানুয়ারি তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, ‘মার্কিন সেংশানের ভয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব পদচ্যুত (জয়ের বন্ধু) আশরাফুল আলম খোকন ভয়ে আমেরিকা ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন।’

গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন নিজের পদত্যাগের বিষয়টি তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের কারণ দেখিয়ে নিজ পদে ইস্তফা দিয়েছেন। ওই সময় পোস্টে তিনি লিখেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে শিক্ষা ছুটির সুযোগ না থাকার কারণে আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ আমি নিজের পদে ইস্তফা দেওয়ার জন্যে আবেদন করেছি। ইতোপূর্বে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের হফসট্রা ইউনিভার্সিটির “গণমাধ্যম, সাংবাদিকতা এবং জন-সংযোগ” বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য খোকন বৃত্তি পান বলে উলেখ করেন।

খোকন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি’র সাবেক মহাসচিব এবং প্রায় সাত বছর প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে প্রথম তাকে এই পদে এক বছরের জন্যে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপপ্রেস সচিব পদে থাকা কালীন সময়ে আশরাফুল আলম খোকন নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা উপার্জন করে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সীমাহীন হয়রানীমূলক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট হয়ে উঠে তার এলাকার মানুষ। গত বছর জানুয়ারিতে তার এলাকার সাবেক সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারদের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন বলে আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, আশরাফুল আলম খোকন নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে বিএনপি নেতাকর্মীসহ আদম ব্যবসায়ী ও পতিতা সরবরাহকারী একটি গ্রুপের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তাকে সার্বক্ষণিক বিএনপির নেতাকর্মী ও শিল্পী ব্যবসায়ীদের সাথেই চলাফেরা করতে দেখা যায় বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হলে নিউ ইয়র্কে স্বঘোষিত করোনাযোদ্ধাকে ও ইউটিউবার ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ বাগিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন শেখ হাসিনার সাবেক উপপ্রেস সচিব পদে থাকা আশরাফুল আলম খোকন। ঘটনা জানাজানি হবার পর ২০২০ সালের ৭ জুন ডা. ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। মোটা অঙ্কের অর্থের পরিবর্তে ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ বাগিয়ে দেওয়ার জন্য যে পরিকল্পনা করেছিল আশরাফুল আলম খোকন তা ফাঁস হয়ে গেলে দেশের করোনা রোগীদের কোনো চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই তাকে কোয়ারেন্টিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়।

এছাড়াও ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি আশিক ইসলামের সাথে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় গোপন বৈঠক করেন। ওই আলোচনার দৃশ্যটি মুঠোফোনে ধারণ করেছিলেন স্থানীয় একজন সাংবাদিক। তা দেখে ফেলেন আশরাফুল আলম খোকন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ওই সাংবাদিকের হাত থেকে তার মুঠোফোন কেড়ে নেন এবং তড়িঘড়ি করে ছবিগুলো মুছে ফেলে তাকে নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করেন। খোকন-আশিকের ওই বৈঠকটি আকষ্মিক না পরিকল্পিত তা নিয়ে চলে নানা আলোচনা। অনেকেই ধারণা করেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আগে থেকেই নিজের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য বিকল্প পথ খুঁজছিলেন খোকন।

ঘটনাটি জানার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। দৃষ্টিকটু উক্ত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের অবহিত করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'বাংলা প্রেস'-এ খবর প্রকাশ হবার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশের মন্ত্রী পরিষদের বেশ তোলপাড় শুরু হয়। দীর্ঘদিন তদন্তের পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনকে পদচ্যুত করার এটি ছিল মূল কারণ বলে সূত্রটি উল্লেখ করেন।

 



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর