বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কোন মতো খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন পাংশার বেত ব্যবসায়ীরা

পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৩১ |আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪০
বেতের ব্যবহার কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বেত ব্যবসায়ী ও কুটির শিল্প ব্যবসায়ীরা
বেতের ব্যবহার কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বেত ব্যবসায়ী ও কুটির শিল্প ব্যবসায়ীরা

ভালো নেই রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বেত ব্যবসায়ীরা। প্লাস্টিক, সিলভার, স্টিল-মেলামাইনসহ বিভিন্ন জাতের পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় এই বেতের পণ্যের কদর কমে গেছে।

মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা বাড়লেও পিছিয়ে পড়েছে বেতের আসবাবপত্র। ফলে বিপাকে পড়েছেন বেত ব্যবসায়ী ও কুটির শিল্প ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগের মত বেচা বিক্রি হয়না, আবার যা হয় তাতে তেমন লাভ হয় না, শুধু পেশাটাকে ধরে রাখতেই ব্যবসাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা, কোন মত টানা হেচড়া করেই চলছে তাদের সংসার।

কুটির শিল্পের পণ্যের বেচা বিক্রি তেমন নেই। এর জেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, মৃৎ, বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে জড়িত কারিগর ও ব্যবসায়ীগণ। এমনই অবস্থায় মৃৎ, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা দাবি করেছেন। এই শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা চায় বিনা সুদে ঋণ। তাহলে তারা বেসরকারি এনজিও ও মহাজনের চড়াসুদের খপ্পর হতে বেড়িয়ে আসতে পারবে।

বাবুপাড়া ইউনিয়নের সুজানগর গ্রামের মো. আবু বক্কর খা (৬৫) বলেন, আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে এই পাংশা রেলস্টেশনে বেতের ব্যবসা করে আসছি। আগে এক পন মানে (৮০) পিছ ভালো মানের বেত বিক্রি করতাম ৩ হাজার থেকে ৩৫শ টাকায় আর এখন সেই বেত সর্বনিম্ন ৮শ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ধোপাকেল্লা গ্রামের মো. দুরুদ আলী বিশ্বাস (৫৫) বলেন, আমি প্রায় ২৬ বছর ধরে এই বেত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা এই বেত সংগ্রহ করে নিয়ে এসে পাংশা রেলস্টেশনে বসে বিক্রি করে থাকি। এখানে ঢাকা, যশোর, পাবনা, কুষ্টিয়া সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারী ও উদ্যোক্তারা বেত কিনে নিয়ে যায়। পরে তারা সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে।

আরও কিছু বেত ব্যবসায়ী বলেন, আগের মত এখন বেচাকেনা হয় না। জেলার বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা বলেন, দেশে বেতের পণ্যের ব্যবহার কমে গেছে, দিকনির্দেশনার অভাবে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছিনা। সরকার যদি আমাদেরকে ঋণ দিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার মত একটা রাস্তা তৈরি করে দিতো, তাহলে এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। তাতে করে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা আমরা সবাই ভালো থাকতে পারতাম।

শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, মানিকগঞ্জসহ আশেপাশে কয়েকটি জেলা থেকে বেত সংগ্রহ করে থাকেন পাংশার বেত ব্যবসায়ীরা।

বেত কিনতে আসা কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার শোমসপুর গ্রামের বেত শিল্পের উদ্যোক্তা সত্য বন্ধু দাস বলেন, আমরা পূর্বপুরুষ থেকেই এই বেত শিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ২০ জন কর্মচারী আছে তার কারখানায়। চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য এই ৩ মাস গ্রামেগঞ্জে নানা উৎস, মেলা ও হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কারুপণ্যের বা কুটির শিল্পের পণ্যের কেনা বেচা হয় খুব ভালো। ধর্মীয় উৎসব ঈদ ও পূজায় ঘর সাজাতে মানুষ এগুলা কিনে থাকে। কিন্তু বাজারে প্লাস্টিক, সিলভার, স্টিল, মেলামাইন কাঠের সহ অন্যান্য আধুনিক জিনিসপত্র বাজার দখল করে নিয়েছে। যার ফলে আমাদের এই মৃৎশিল্পের কদর কমে গিয়েছে। যে কারণে আমরা এই সেক্টর থেকে লাভবান হতে পারছি না। তবে সরকারি প্রণোদনা পেলে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

রাউন্ড ট্রে, ডিম ঝুড়ি, পট হ্যাঙ্গিং, হ্যাঙ্গার, ফুড ক্যাপ, সিলিন্ডার, পাতিল, চেয়ার টেবিল, সোফা সেট, ম্যাথ, জুয়েলারি বক্স, সূর্যমুখী আয়না সহ ২৫ থেকে ৩০ টা আইটেমের আসবাবপত্র তৈরি করে থাকেন খোকসা উপজেলার (দাস হান্ডিক্যাপস) নামে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কুটির শিল্পের মহা ব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা আছে। তারা চাইলে সঠিক কাগজপত্র দিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। ব্যবসায়ীদের জন্য কোন ধরনের প্রণোদনা বা ঋণের ব্যবস্থা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি বেত শিল্পের ব্যবহারের পরিধি বাড়াতে। এই শিল্পটা ঠিকমতো বাজারজাত করা গেলেই ব্যবসায়ীরাও বাঁচবে, উদ্যোক্তারাও এখান থেকে ভালো কিছু আয় করতে পারবেন।



মন্তব্য করুন