শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাচ্চার জন্য স্কুল : বাংলা নাকি ইংলিশ মিডিয়াম নাকি ইংলিশ ভার্সন?

সুব্রত দত্ত
১৯ মে ২০২২ ০৭:৫৭ |আপডেট : ২০ মে ২০২২ ০৬:৪৭
সুব্রত দত্ত, শিক্ষক
সুব্রত দত্ত, শিক্ষক

বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কয়েক ধরনের শিক্ষা মাধ্যম রয়েছে। বাংলা মিডিয়ামের পাশাপাশি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইংলিশ ভার্সন। ইংলিশ মিডিয়ামের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের আওতায় রয়েছে উচ্চশিক্ষা নেয়ার বড় সুযোগ। মাদরাসা শিক্ষাক্রমভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ইংলিশ ভার্সনে চলছে। বাচ্চার জন্য স্কুল নির্বাচন করতে গিয়ে এতগুলো অপশন পেয়ে বাবা-মায়েরা আনন্দিত নাকি শংকিত- সে প্রশ্নের উত্তর বোধ করি সকলেরই জানা।

সেদিন চায়ের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল এক সহকর্মীর সঙ্গে। তিনি তার মেয়েকে ঢাকার একটি স্বনামধন্য বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছেন সম্প্রতি। তিনি কিন্তু আমারই মতো ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষক। আমার থেকে আরো বহুদিন আগে থেকে তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তার স্ত্রীও একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা। স্বভাবতই তার প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া যায় যে, মেয়েকে কেন বাংলা মিডিয়াম স্কুলে দিলেন? প্রতি উত্তরে তিনি যা বলবেন, সেটা জীবনঘনিষ্ঠ, যুক্তিনিষ্ঠ এবং বুদ্ধিদীপ্ত নিঃসন্দেহে। তার সেই প্রতি উত্তরের কথা পরে বলছি। তার আগে বর্তমান সময়ের বাবা-মায়েদের বড় চিন্তা এই- ‘বাচ্চার জন্য স্কুল বিষয়টায় প্রবেশ করা যাক।

বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কয়েক ধরনের শিক্ষা মাধ্যম রয়েছে। বাংলা মিডিয়ামের পাশাপাশি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইংলিশ ভার্সন। ইংলিশ মিডিয়ামের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের আওতায় রয়েছে উচ্চশিক্ষা নেয়ার বড় সুযোগ। মাদরাসা শিক্ষাক্রমভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ইংলিশ ভার্সনে চলছে। বাচ্চার জন্য স্কুল নির্বাচন করতে গিয়ে এতগুলো অপশন পেয়ে বাবা-মায়েরা আনন্দিত নাকি শংকিত- সে প্রশ্নের উত্তর বোধ করি সকলেরই জানা। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও বাবা-মায়ের প্রধান চিন্তা ছিল ছেলে বা মেয়েকে একটা নামকরা স্কুলে ভর্তি করা, সেখানে বর্তমানে অপশনের ছড়াছড়িতে নাস্তানাবুদ অবস্থা। এইরূপ পরিস্থিতিতে বাবা-মা কী করতে পারেন- তারই একটা ছোট্ট গাইডলাইন হতে পারে আমার এই লেখাটা।

প্রথমে আমাদের সবগুলো মাধ্যম সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত অথচ স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে নিতে হবে। সুতরাং চলুন দেখা যাক মাধ্যমগুলো আসলে কী?

বাংলা মিডিয়াম

বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও শিক্ষানীতি অনুসৃত প্রধান শিক্ষা মাধ্যম বাংলা মিডিয়াম কারিকুলাম। প্রাক-প্রাথমিক, নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় বাংলায় পড়ানো হয়। শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপেই শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক গৃহীত নীতি অনুসৃত হয়।

ইংলিশ ভার্সন

বাংলা মিডিয়ামের কারিকুলামকে অনুসরণ করে কেবল প্রতিটি বিষয় ইংরেজি ভাষাতে পাঠদান ও মূল্যায়নের মাধ্যমকে ইংলিশ ভার্সন বলে। এক্ষেত্রে পুরোপুরি কারিকুলাম ও প্রতিটি ধাপই হুবহু বাংলা মিডিয়ামের মতো।

ইংলিশ মিডিয়াম

ইংলিশ মিডিয়াম হলো আন্তর্জাতিক কারিকুলামে অনুসৃত শিক্ষা পদ্ধতি। এখানে মূলত ও-লেভেল (মাধ্যমিক সমপর্যায়) এবং এ-লেভেল (উচ্চ মাধ্যমিক সমপর্যায়) ধাপ রয়েছে। বাংলাদেশে কেমব্রিজ কারিকুলাম ও এডেক্সেল কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। এছাড়াও সীমিত পরিসরে আরো কয়েকটি কারিকুলাম রয়েছে। ইংলিশ মিডিয়ামের বইপত্র থেকে পরীক্ষা, মূল্যায়ন পদ্ধতি কোনো কিছুই বাংলা মিডিয়ামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।

মাদরাসা কারিকুলাম

মূলত কোরআন শিক্ষা ও আরবি ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে মাদরাসা কারিকুলাম দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এক শিক্ষা মাধ্যম। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে ইংরেজি, বিজ্ঞান, কম্পিউটার শিক্ষাকেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এই কারিকুলামে পড়ানো হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এই কারিকুলামে।

কারিগরি শিক্ষা

মূলত মাধ্যমিক পর্যায় থেকে এই কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়। হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প আর নেই। উন্নয়নশীল দেশে এই শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক।

মাধ্যমগুলো সম্পর্কে খানিকটা ধারণা পেলেই কিন্তু একজন বাবা কিংবা মা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারবেন না যে তার সন্তানকে ঠিক কোন কারিকুলামে ভর্তি করাবেন। অনেকেই কিন্তু চিন্তা-ভাবনা না করেই বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দেন। অনেকে আবার মনে করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে না পড়ালে সমাজে তার মর্যাদা থাকবে না। অনেকে স্বভাবতই মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই উত্তম মনে করেন। আমার মনে হয় দ্বিধাবিভক্তি বাবা-মায়ের থেকে তারা কিছুটা এগিয়েই আছেন। কারণ, সন্তানের উন্নতি, যোগ্য হয়ে ওঠা ও কর্মক্ষেত্রে সফল হয়ে ওঠার জন্য কোন মাধ্যমটিতে সে পড়াশুনা করেছে তা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং, সে কতটুকু সুষ্ঠু পরিবেশে, যথাযথ গাইডলাইনে বেড়ে উঠছে সেটা জরুরি। কেউ হয়তো বলে উঠতে পারেন, তবে এত আলাপ কেন এ নিয়ে? হ্যাঁ, আলাপ জরুরি। খুব জরুরি। ওই যে বললাম সুষ্ঠু পরিবেশ ও যথাযথ গাইডলাইনের কথা। এই প্রসঙ্গেই কোন কারিকুলামটি আপনার সন্তানের জন্য ভালো হবে তা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।

আমি শিক্ষকতায় রয়েছি ৭ বছর। বাংলা মিডিয়ামে অল্প কিছুদিন পড়ানোর পরই ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষকতা শুরু করেছিলাম। ইংলিশ ভার্সনে পড়ানোর সুযোগ হয়নি। তবে জানি কমবেশি। অভিজ্ঞতার আলোকে একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই যে, মাধ্যম কিংবা কারিকুলাম পরিবর্তন ঠিক না। ধরুন ভাবলেন সন্তানকে থ্রি-ফোর পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়ে পরে বাংলা মিডিয়ামে নিয়ে আসবেন। অথবা, বাংলা মিডিয়াম থেকে ইংলিশ ভার্সনে নিবেন বা ইংলিশ মিডিয়াম থেকে নিয়ে আসবেন ইংলিশ ভার্সনে। এটা ঠিক নয়। হ্যাঁ, আনতেই পারেন। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে, শিক্ষার্থীর বিকাশে এটি নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এবার আসুন, কোন কারিকুলাম কোন ধরনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে এবং তার সীমাবদ্ধতাই বা কতটুকু তা জেনে নেই।

বাংলা মিডিয়াম নিঃসন্দেহে এদেশের সেরা কারিকুলাম। এই কারিকুলাম অনুসরণ করেই উচ্চশিক্ষা এবং কর্মজগতে প্রবেশ সহজ হয়। চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনুসৃত পরীক্ষা-পদ্ধতি বাংলা মিডিয়াম কারিকুলাম অনুসরণ করেই তৈরি। তাহলে নির্দ্বিধায় এই কারিকুলাম বেছে নেয়া চলে। কিন্তু তবুও নথিগত আলাপের বাইরেও বাস্তবতার দিকটিতে তাকাতে হয় আমাদের। বাংলা কারিকুলাম, শিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, শিক্ষার্থী কি প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে কিংবা তার শেখার পথটা কি ঠিক আছে কিনা- এসব নিয়ে ভীষণ শোরগোল হয় সবসময়। হ্যাঁ, এটা সত্য শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে দেশের জ্ঞানী-গুণীজনেরা কারিকুলাম নিয়ে কাজ করছেন এবং চেষ্টা করছেন কারিকুলামকে আরো উন্নত করতে। বর্তমানে যে কারিকুলামে বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছে তাতে অনেক অনেক বিষয় তাদের পড়তে হচ্ছে, সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফল অর্জন করতে হচ্ছে কিন্তু তারপর দেখা যায় প্রতিটি বিষয়ের বেসিক জ্ঞান ও পারঙ্গমতায় অনেকেই পিছিয়ে থাকছে। এছাড়া, অত্যাধিক পড়ার চাপ, অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ভালো রেজাল্ট করার মানসিক চাপ শিক্ষার্থীদের একরকম বিপর্যস্ত করে রাখছে সবসময়। সেক্ষেত্রে ইংলিশ মিডিয়ামের কারিকুলামের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন সেটা বেশ সাজানো-গোছানো, স্বল্প পরিসর আর অল্প চাপের। এখানেও নানা রকমের চাপ শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় কিন্তু কোন কোন বিষয় সে পড়তে চায় তা যেমন সে মাধ্যমিক পর্যায়েই ঠিক করতে পারে, তেমনি প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাসেই রয়েছে বিষয়টির বেসিক পাঠ। ফলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে আর মুখস্ত করে তাকে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হয় না। আন্তর্জাতিক কারিকুলাম হওয়ায় তার অর্জিত গ্রেড পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই গ্রহণযোগ্য ফলে উচ্চশিক্ষায় তার সুযোগ থাকে বেশি। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এই যে, দেশের বৃহৎ চাকরি বাজারে জায়গা করে নিতে বাংলা মিডিয়ামই ভালো এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংলিশ মিডিয়ামই ভালো। কিন্তু বিষয়টা কিন্তু মোটেও তা নয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েও দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া যায়, সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট করে চাকরির বাজারে সহজেই ভালো পজিশনে যাওয়া যায়। আবার বাংলা মিডিয়ামে পড়েও স্কলারশিপ নিয়ে বা না-নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা যায়। তবে, স্বাভাবিক বিষয়টি হলো অধিকাংশ কোন পথ অনুসরণ করছে সেটা খেয়াল করা। বাংলা মিডিয়াম দেশীয় প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বেশি, অন্যদিকে ইংলিশ মিডিয়াম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাবনাময়।

বাংলা মিডিয়াম কারিকুলাম আমাদের জন্য বাই-ডিফল্ট টাইপের। তাই সেটা নিয়ে যতটা আলাপ জরুরি, তার থেকে ইংলিশ মিডিয়াম নিয়ে আলাপটা বেশি করা প্রয়োজন। ইংলিশ মিডিয়ামে সন্তানকে ভর্তির পূর্বে আপনাকে কয়েকটি বিষয় একটু ভালোভাবে ভেবে নিতে হবে। আপনার লক্ষ্যটা ঠিক কী (যদিও সন্তানের লক্ষ্য তো সে-ই ঠিক করবে)? দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানোর ইচ্ছা, সম্ভাবনা, সুযোগ যদি আপনার বেশি থাকে তবে ইংলিশ মিডিয়ামই ভালো। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন ইংলিশ মিডিয়ামে সন্তানকে পড়িয়ে দেশীয় চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নামাবেন- তবে আপনার ভাবনায় ভুল আছে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেই দারুণ ইংলিশ পারা যায়- তা কিন্তু মোটেও না। বরং, ইংলিশ মিডিয়াম কারিকুলাম থেকে এসে আপনার সন্তান বড় বিপাকে পড়বে বাংলা কারিকুলামের সঙ্গে অভিযোজন করতে। এছাড়া, আপনাকে অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও নিশ্চিত করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বাংলা মিডিয়ামের অন্তত দশগুণ বেশি খরচ হয় ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে গিয়ে। আরেকটি বিষয় আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি। ইংলিশ মিডিয়ামের একজন শিক্ষার্থীর পোশাক, আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ স্বভাবতই খানিকটা ভিন্ন হবে যেহেতু সে যেসব বইপত্র পড়বে, যে সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়ে উঠবে- তা পুরোপুরি এদেশীয় হবে না। বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করতে গিয়ে কিন্তু এতসব ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। তবে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে গিয়ে আপনাকে এটিও মনে রাখতে হবে গ্রেড এইট (অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত আপনার সন্তান যে কারিকুলামে পড়বে সেটা পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের কিনা তা কিন্তু আপনি সিওর হতে পারবেন না। আপনার সন্তান যখন ও-লেভেল-এর জন্য প্রস্তুতি নিবে তখনই কেবল সে আন্তর্জাতিক কারিকুলামে পড়া শুরু করবে। সাধারণত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো তাদের নিজ নিজ উদ্যোগে কারিকুলাম তৈরি করে থাকে গ্রেড এইট পর্যন্ত। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তারা আন্তর্জাতিক কারিকুলামের গাইডলাইন অনুসরণ করে তবে কতটুকু- তা আপনি জানতে পারবেন না। বাংলা মিডিয়ামে কিন্তু একেবারে প্লে-গ্রুপের সিলেবাসও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে অনুসৃত।

তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে চোখ বুজে যেমন বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করানো চলে, ইংলিশ মিডিয়ামের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত সহজ না। আপনাকে ভেবেচিন্তে, যাচাই-বাছাই করে, একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে সামনে রেখে, তারপর বাচ্চাকে নিয়ে ইংলিশ মিডিয়ামের দ্বারে দাঁড়াতে হবে। এবং অবশ্যই আপনাকে স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যাচাই-বাছাই করতে হবে বেশি। স্কুল কতটুকু আন্তর্জাতিক কারিকুলাম অনুসরণ করে তার খোঁজ-খবরও নিতে হবে। যারা মনে করেন অথবা আসলেই যাদের কাছে ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চাদের পড়ানোটা শো-অফ, তাদের জন্য এই আলাপ নিরর্থক। তবে আপনি যদি সত্যি চান আপনার বাচ্চার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ সেক্ষেত্রে যে কারিকুলামেই ভর্তি করান না কেন- আগে তার ক্ষেত্র ও পরিধি এবং সম্ভাবনা-সীমাবদ্ধতার দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে আপনাকে। আলাপ করতে হবে তাদের সঙ্গে যাদের কাছ থেকে সুপরামর্শ পেতে পারেন বলে মনে করেন। বাংলা মিডিয়ামের বড় সীমাবদ্ধতা বৃহৎ সিলেবাস ও পড়া-পড়ানোর একটি ভৌতিক পরিস্থিতি। এবার চলুন লেখার শুরুতে যে গল্পটা এনেছিলাম তার সমাপ্তিটা টানি। আমার সহকর্মী কিন্তু এই বৃহৎ সিলেবাস ও পড়া-পড়ানোর ভৌতিক পরিস্থিতিকেই ইতিবাচকভাবে নিয়ে তার মেয়েকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। বাচ্চাকে প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম স্থান অধিকার করতে হবে, একশোতে একশো পেতে হবে, সবার থেকে বেস্ট হতে হবে- এই ধরনের চাপগুলো যদি না দেন, যদি তাকে আপনি নিজে নিজ-দায়িত্বে গাইডলাইন দিতে পারেন, তাহলে বাংলা মিডিয়ামের ভৌতিক পরিস্থিতি, মোটেই ভৌতিক লাগবে না শিক্ষার্থীর কাছে। অন্যদিকে, ইংলিশ মিডিয়ামেও কিন্তু আপনাকে যথেষ্ট শ্রম দিয়ে, আপনার বাচ্চার পড়াশুনার আপডেট জেনে রেখে, তাকে গাইডলাইন দিয়েই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ইংলিশ ভার্সন যেহেতু বাংলা মিডিয়ামের কেবল ইংরেজি রূপান্তর সেহেতু তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করলাম না। আর মাদরাসা কিংবা কারিগরি বোর্ড নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করা যেতে পারে।

 

লেখক :

সুব্রত দত্ত

শিক্ষক, তেজগাঁও




মন্তব্য করুন