শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আবুল হোসেন

পদ্মা সেতুতে ২০১৩ সালেই গাড়ি চলত

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুন ২০২২ ০৯:৩৬ |আপডেট : ২৬ জুন ২০২২ ২০:৩৪
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি পর্যায়ে সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। ওই সময় পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগের তীর আবুল হোসেনের দিকেও ওঠে। সেই অভিযোগ মাথায় নিয়েই যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় তাঁকে। যদিও পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে আবুল হোসেনসহ অভিযুক্ত সবাই নির্দোষ প্রমাণিত হন। পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনের প্রাক্কালে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছে সৈয়দ আবুল হোসেন।

সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, দেশের মানুষের জন্য এটা খুশির খবর। সামগ্রিকভাবে আমিও খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব বাধা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন; নিজেদের সক্ষমতা, আন্তরিকতা, জন-অঙ্গীকার এবং সততার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। আমার ভালো লাগছে এই ভেবে যে, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছেন, সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার প্রথমদিন থেকে আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে মনোযোগী হই। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া, পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান, মূল সেতুর প্রাক-যোগ্য দরপত্র আহ্বান এবং সেতুর অর্থায়ন সংস্থা-বিশ্বব্যাংক, জাইকা, ইসলামী উন্নয়ন সংস্থা এবং এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তির উদ্যোগ নিই। স্বল্পসময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পুনর্বাসনসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসি। এমনকি প্রাক-যোগ্য দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়াও শেষ করি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতির কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে মাত্র দু'বছরে আমরা পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ শেষ করেছি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হবে, এমন লক্ষ্য নিয়েই দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলাম।

সাবেক এই যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আসলে সব ডোনার এজেন্সির সমন্বয়ক ছিল বিশ্বব্যাংক। তারা পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজের প্রতিটি পর্যায় অবলোকন ও অনুমোদন করে। পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগের প্রতিটি পর্যায়ও বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনে অগ্রসর হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচনের একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে এবং নানাদিক থেকে অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে।

তিনি বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের দুই বছরে আমি পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি কাজ শেষ করে এনেছিলাম। শুধু মূল সেতুর প্রাক-যোগ্য দরদাতা নির্বাচনে বিশ্বব্যাংকের একটি তদবির অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কারিগরি কমিটি কার্যকর করতে অপারগতা প্রকাশ করার পরই আমার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। কিন্তু এই অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও অসত্য। এর উদ্দেশ্য ছিল, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বিলম্বিত করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। আসলে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিনষ্ট করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা।

বিশ্বব্যাংক কেবল মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হয়নি, আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যও সরকারের ওপর অন্যায় চাপ দেয়- এ কথা উল্লেখ করে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, দুদকের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ওকাম্পো আমার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলেও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব এবং আমাকে গ্রেপ্তার করার কথাও বলেন। সার্বিক বিবেচনায় দেশ ও পদ্মা সেতুর স্বার্থে আমি নিজেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করি। এরপরও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। অবশ্য পরবর্তীকালে দুদকের তদন্ত ও কানাডার আদালতের রায়ে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।

তিনি আরও বলেন, আসলে প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করেই সরকারের সততা ও আন্তরিকতা প্রদর্শনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকার এবং যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমার সততা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আরেকটি কথা বলতে চাই, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংক যদি কথিত ও মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ না তুলত- তাহলে ২০১৩ সালেই পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হতো। মানুষ এই সেতুতে চড়তে পারত।



মন্তব্য করুন