বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে জাবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগ

আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাবি
২ জুলাই ২০২২ ১৫:২৩ |আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২০
অধ্যাপক রাশেদা আখতার
অধ্যাপক রাশেদা আখতার

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে কোনো শিক্ষককে দায়িত্ব না দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) স্পষ্ট চিঠি থাকা সত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে কোষাধ্যক্ষের পাশাপাশি ছয়দিনের জন্য অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাত্র ছয় দিনের জন্য একজন শিক্ষককে কেন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হলো এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকেই পুনরায় চুক্তিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগের আয়োজন চলছে।

রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, সদ্য অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে আবারও চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি- অবসরপ্রাপ্ত একজনকে পূনরায় রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া বিশ^বিদ্যালয়ে যোগ্য রেজিস্ট্রার প্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি’।

রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, গতকাল ৩০ জুন ছিল ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন থেকে আগামী ৬জুন পর্যন্ত রহিমা কানিজ অবসর প্রস্তুতিম‚লক ছুটিতে থাকবেন। তার এই ছুটিকালীন সময়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বপালন করবেন।

এদিকে এ বছরের ২০ মার্চ ইউজিসি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারগণের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্ব প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি/সামরিক কর্মকর্তা এবং ক্ষেত্র বিশেষে কলেজের শিক্ষকগণকে চুক্তিভিত্তিক/খন্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

সে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠাকাল হতে ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সম‚হে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে অবিলম্বে বিধি মোতাবেক পূর্ণকালীন নিয়োগ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।’

এদিকে চুক্তিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে ২০১৬ সালের ৩০০তম সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচির বিবিধতে (ক) বলা হয় এখন থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি কোন পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির সভাপতি আজিম উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতো বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন যে, তারা যেখানে যা প্রয়োজন তা নিচ্ছে, যা বাদ দেওয়ার তা বাদ দিচ্ছে। তারা কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। প্রায়শই তারা স্ববিরোধী কাজ করে যাচ্ছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। চোরকে চুরি করতে হলেও পরিপক্ক হতে হয়, কিন্তু এরা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) চুরি করারও পরিপক্কতা অর্জন করতে পারেনি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের আমলে অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটা অর্ডিন্যান্স ছিল। কিন্তু প্রশাসন সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সেসময় ৬জন শিক্ষককে নিয়োগ করেছিল। শিক্ষক নিয়োগের মতো জায়গায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন রেজিস্ট্রার নিয়োগে অনিয়ম হবে এতে আমি খুব বেশি অবাক হব না। তবে আমি আশা করব এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে সময় নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘এ দায়িত্ব তো তাকে (রাশেদা আখতার) সিন্ডিকেট (গত সোমবার ২৭ জুন) থেকেই দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট হয়তো এটা ভালো মনে করেছে তাই করেছে।’



মন্তব্য করুন