মুখরোচক খাবারে সমৃদ্ধ বাগাতিপাড়া
লেখক এম. খাদেমুল ইসলাম
নাটোরের বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন বাজারে তৈরি হয় বিভিন্নজনের তৈরি নানা রকমের মুখরোচক খাবার। যেগুলো খেলে আপনার মন নিমিষেই হয়ে উঠবে পুলকিত। দুধ-চা, কফি, চানাচুর, লুচি, রুটি, পেঁয়াজু, জিলাপি ও মিষ্টি থেকে শুরু করে নানা মুখরোচক খাবারে সমৃদ্ধ এ জনপদ।
মাঠ-ঘাট সবুজে সমারোহে পরিপূর্ণ বাগাতিপাড়ার
বিস্তীর্ণ প্রাণবন্ত লোকজ প্রান্তরে ঢেকে রয়েছে দিক্বিদিক। ফুল, ফসল, সমাজ ও সংস্কৃতির
পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে হাতের পরশে তৈরি নানা রকমের খাবার। রয়েছে
নিপুন ক্ষমতা সমৃদ্ধ মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হওয়া এসব মুখরোচক খাবারগুলো সারা দিনের ক্লান্তি শেষে মানুষের মুখে যোগায় তৃপ্তির ঢেকুর। যেগুলো ফিরিয়ে আনে
মুখে স্বাদ ও রুচি। সময় করে ঘুরে যাবার আমন্ত্রণ রইল। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা মেলে
এমন নানান মুখরোচক খাবারের।
উপজেলার মালঞ্চি ও পাঁকা বাজারে দিন গড়ালে
বিভিন্ন রকমের মুখোরোচক মিষ্টি জাতীয় খাবারের দোকান করে গোবিন্দ ও রঞ্জিত দাস। এর পাশাপাশি
সম্পূর্ণ নিজেদের ফর্মুলায় তৈরি করেন ঝুরি-চানাচুর। বাজারের নানা রঙে-ঢঙে বিক্রি হওয়া
চানাচুরের মাঝে তাদের চানাচুর বাহারি বাজার দখল করে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। যে একবার
মুখে দিয়েছে সে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বারবার ছুটে আসে এই চানাচুরের টানে।
পেঁপে, পেঁয়াজ, ধনে পাতা, শাক, মুলা ও
অন্যান্য সবজির মিশ্রণে কড়াই ভর্তি গরম তেলে ঢেলে দিয়ে সুস্বাদু পেঁয়াজু তৈরি করা হয়
এখানে। বাগাতিপাড়া সরকারি ডিগ্রী কলেজ গেটের সামনে বাক্কার, দয়ারামপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডে
সুজন ও মাকুপাড়া মোড়ের পূর্ব দিকে ছপির আলীসহ সকলের দোকান ঘিরে বিকেলে জমে উঠে বেচা-বিক্রির
ভিড়। এমন সুস্বাদু সবজি, পেঁয়াজু আশেপাশের দু-দশ গ্রামে জুড়ি মেলা দায়। দূর-দূরান্ত
থেকে অনেকেই ছুটে আসেন শুধু সবজি পেঁয়াজু খাওয়ার জন্য।
দয়ারামপুর রহ্মানিয়া, তমালতলা ঊষা ও মালঞ্চির
মাহী হোটেলে নিত্য দিন গরম চুলার ভিতরে আগুনে ছেঁকে তৈরি হচ্ছে তন্দুর রুটি। তন্দুর
রুটির সাথে গ্রিল ও গরুর মাংসের বাহারী ঝলকের নাম শুনলেই যেন জিভে জল চলে আসে। নিত্যদিনে
নিত্যনতুন মানুষের আগমনে ক্রমেই জমে উঠেছে হোটেলের রুটি ব্যবসা। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে
এমন আয়োজন আপনার মন কেড়ে নিবে সু-নিশ্চিত।
বিকেল হলে যোগিপাড়া মোড়ে একসাথে বসে আড্ডা
দেয়ার পাশাপাশি রাকিবের কফি ছাড়া যেন চলে না মোটেও। হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা মিশ্রিত
বাহারী এ কফি যেন চৌম্বুকীয় শক্তিতে টেনে আনে এখানে। কফিতে-কফিতে যে কত জনের মনের উক্তি
ব্যক্ত হয় তা দেখতে হলে এখানে আসতে হবে। কফি শপের আড্ডাটা যেন ফিরিয়ে এনেছে রাকিব।
বিহারকোল বাজারে মনিরুল’র দোকানে গরম-গরম
লুচি আপনার যে কোন ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। বিশ্বাস না হলে একবার যাচাই করে আসতে
পারেন।
ভেবে দেখুন মুড়ি, চানাচুর,
ছোলা, বাদাম ও লেবুর সাথে অন্যান্য উপাদেয় খাদ্য-দ্রব্য পাত্র ঢেলে কাঠি দিয়ে পাকিয়ে
পাকিয়ে সেই পাত্রের মুখ আটকে ঝাকি দিয়ে দিয়ে ঝনাক
ঝনাক শব্দে মিশ্রণ করে কাগজের ঠোঙায় করে পরিবেশন করা হচ্ছে মুড়ি ভাজা। আর আপনি সেই
মুড়ি ভাজা বসে বসে খাচ্ছেন আর গল্প করছেন। আপনার পাশাপাশি আপনার মত অনেকই মজেছে এমন
কর্মে। কেমন লাগবে বলুন তো? হ্যাঁ, ভাবতে ভাবতেই আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য জগতে। আর ভাবতে
হবে না, এমন সুস্বাদু মুড়ি মাখানো পাবেন মালঞ্চি বাজারের রেলগেট শরিফ ও একডালা মশা’র
দোকানে। মন চাইলে অবসরে একবার ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে।
একই জিনিস একই ধরনের উপকরণ হলেও একেক জনের
হাতে একেক রকম স্বাদের হয়ে উঠে। তেমনি দুধ-চা অনেক জায়গায় পাওয়া গেলেও ঠোঁটের সাথে
লেগে থাকার মত তৃপ্তিকর দুধ-চা খেতে হলে আপনাকে আসতে হবে বিহারকোল’র বাবর আলী, তমালতলার
শরিফুল ও দয়রামপুরের মকবুল হোসেন’র চায়ের দোকানে। কাপের ভিতরে চায়ে চিনি মেশানো চামুচের
মনোমুগ্ধকর টুংটাং আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে মেতে উঠবেন রুচিসম্মত দুধ চা খাওয়াতে।
তাছাড়াও বাগাতিপাড়ার এক টাকার মোড়ের খবর
কে না জানে? এখানে মাত্র এক টাকায় পাওয়া চা কিংবা পানের পরচিতি ঢের। স্বল্প খরচে উপাদেয়
এমন খাবারে মানুষের যেমন আগ্রহ তেমনি রুচিকরও বটে। এক টাকার মোড়ে এক টাকার বিনিময়ে
পাওয়া এমন ভালোবাসা প্রতিদিন নিতে আসে অসংখ্য মানুষ।
দোকানে কাঁচের শো-কেচে তাকে তাকে সাজানো
রঙ-বেরঙের মিষ্টি দেখে জিভে জল আসে প্রতিটি মানুষের। নানান রঙে-ঢঙে তৈরি হওয়া ভিন্ন-ভিন্ন
আকার আকৃতির মিষ্টি দেখতে যেমন ভাল লাগে তেমনি খেতেও লাগে ভালো। বাঁশবাড়ীয়া বাজারের
'মজাহারের মিষ্টি' যে একবার খেয়েছে চাইলেও তার জীবনে আর সেই মিষ্টির স্বাদ ভুলতে পারবে
না। সম্পূর্ণ নিজস্ব পরিসরে নিজেদের ফর্মুলায় তৈরি এই মিষ্টি যেমনি সুস্বাদু তেমনি
চমকপ্রদ। মজাহারে এই মিষ্টি পাবেন বাঁশবাড়িয়া বাজারের মাঝখানে মতলেবের মোল্লা সুইটসে।
মন না চাইলেও একবার ঘুরে যেতে পারেন, কথা দিচ্ছি ভালো লাগবেই লাগবে। তেমনি বাহারী মিষ্টির
মাঝে ভিন্ন রঙের 'কালোজাম' খেতে পারবেন পাশ্ববর্তী করিমপুরের মতিলালের দোকানে। দোকানির
নামে লাল শব্দ থাকলেও তার হাতে কালো রঙের কালোজাম যেন হয়ে উঠে অমৃত।
রবি ও বুধবারে দুপুরের পর গরম তেলে ভাজা
রসে টসটসে জিলাপি পাওয়া যায় পার্শ্ববতী ঝিনা বাজারের রেল গেটের দক্ষিণপাশে। এই জিলাপিতে
কামড় দেওয়ার সাথে সাথে বাঁধ দিয়েও আটকে রাখতে পারবেন না গড়িয়ে পড়া রস। রসে ভরা গরম
এই জিলাপি মুখে দিলে মুহূর্তেই হারিয়ে যাবেন অন্য এক জগতে। এ যেন রসে টলমল এক ভিন্ন
জগৎ।
আপনি যদি পান ভালোবাসেন তাহলে আপনাকে আসতেই
হবে বাগাতিপাড়ায়। উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সাদিমারা বটতলা মোড়ের মহসিন’র পানের দোকানে।
এক হাত দিয়ে পরম যত্নে প্রায় আড়াই যুগ ধরে পান তৈরি করে মহসিন। মিষ্টি ও জর্দা দিয়ে
নানা রকমের পান খেতে এখানে ভিড় জন্মায় প্রতিদিন।
এগুলোর বাইরেও পাবেন বরফ, আমড়া কিংবা কামরাঙা
মাখানো, আখের রস, মালাই চা, বিভিন্ন ধরনের চপ, মুগলাই, গুড়ের মোয়াসহ হরেক রকম রুচিকর
খাবার। প্রতিটি বাজার যেন ভিন্ন ভিন্ন সমারহে মুখরিত।
কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। তেমনি মমতা মিশিয়ে করা কাজ দিন শেষে হয়ে উঠে সফল ও প্রাণপ্রাচুর্যময়। তাই সকলে ক্ষমতা থাকলেও বিশেষ বিশেষ কাজ বিশেষ জনের কাছে ধরা দেয় বিশেষত্ব হয়ে। বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ঘুরে দেখা যায় তেমনি দৃশ্য। নানান মুখোরোচক খাবারের এমন বিরল দৃষ্টান্ত এখানে যেন দানা বেধে আছে। সময় পেলে ঘুরে যেতে পারেন আপনিও।
মন্তব্য করুন