বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হোম অফিস নিয়ে কাদের কী মনোভাব

বিবিসি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:২১ |আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৫১
হোম অফিস। প্রতীকী ছবি
হোম অফিস। প্রতীকী ছবি

একটা সময় অফিসের কাজ ঘরে বসে করার চিন্তা ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু করোনা মহামারি মানুষের কাজের ধরন বদলে দিয়েছে। মহামারির মধ্যে মানুষ অফিসের কাজ ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাড়িতে বসে করেছেন সফলভাবে। তবে করোনা প্রকোপ কমতে শুরু করলে প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনতে শুরু করে।

যদিও অনেক কর্মী ঘরে বসে কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় অফিসের আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, বাড়িতে বসে কাজ করায় অফিসে আসা-যাওয়ার হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে না। আবার বেশি কাজও করা যাচ্ছে। তবে বিখ্যাত প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের পরিচালিত বড় ধরনের একটি জরিপে দেখা গেছে, অফিসের ঊর্ধ্বতনদের অনেকেই কর্মীদের এই মনোভাবের সঙ্গে একমত নন। ঘরে বসে কাজ করলে যথেষ্ট পরিমাণ কাজ হয় কি না, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সন্দেহ আছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ কর্মী মনে করেন, তাঁরা ঘরে বসে অফিসের সমান বা এর বেশি কাজ করেন। তবে ঊর্ধ্বতনদের ৮০ শতাংশই এই মনোভাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। জরিপটি ১১টি দেশের ২০ হাজারের বেশি কর্মজীবী মানুষের ওপর পরিচালিত হয়েছে।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা বলেন, এই মতপাথর্ক্যের সমাধান প্রয়োজন। কারণ, কর্মক্ষেত্রগুলো আর কখনোই করোনা মহামারির আগের সময়কার পরিস্থিতিতে ফিরতে পারবে, সেই সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা সব তথ্যে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশের বেশি কর্মী মনে করেন যে তাঁরা খুব দক্ষ এবং যথেষ্ট কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মনোভাব এর বিপরীত। এর মানে, কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা এবং কর্মীরা যা মনে করেন, তার মধ্যে ফারাক রয়েছে। এই যে দুই পক্ষের মধ্যকার ধারণাগত দূরত্ব, তা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে।

নাদেলা ও মাইক্রোসফটের মালিকানাধীন লিংকডইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান রোসলানেস্কি উভয়ই মনে করেন, মহামারির কারণে অফিসের কাজে ইতিহাসের সবচেয়ে যে বড় পরিবর্তন ঘটে, তাতে খাপ খাইয়ে চলতে নিয়োগকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়।

রোসলানেস্কি বলেন, মহামারি চলাকালে লিংকডইনে ঘরে বসে চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন সর্বোচ্চ পর্যায়ে বেড়ে গিয়েছিল। সাধারণত ১ কোটি ৪০ থেকে ৫০ লাখ কাজের তালিকা লিংকডইনে দেওয়া থাকে। মহামারির আগে এই কাজের তালিকার মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ ছিল ঘরে বসে কাজের সুযোগ। কিন্তু মহামারি শুরুর পর কয়েক মাস আগে তা বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়। চলতি মাসে অবশ্য কমে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

নাদেলা মনে করেন, তীব্র কর্মীসংকটের এ সময় নিয়োগকর্তাদের কর্মীদের নিয়োগ, উৎসাহ প্রদান এবং তাঁদের ধরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। করোনা মহামারির সময় মাইক্রোসফটে ৭০ হাজার কর্মী নিয়োগ পান। তাঁরা ঘরে বসে কাজ করেছেন। তাঁরা মাইক্রোসফটকে সেভাবেই দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন যখন আমরা পরবর্তী ধাপের কথা ভাবছি, তখন এসব কর্মীকে পুনরায় উদ্যমী করে তুলতে হবে, পুনর্নিয়োগ করতে হবে, সামাজিকতার স্থান থেকে তাঁদের সহায়তা করতে হবে।

মাইক্রোসফটের কর্মীরা এখন কর্মঘণ্টার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারেন। এর চেয়ে বেশি সময় করতে চাইলে বা খণ্ডকালীন কাজ করার জন্য লাগবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কাজের নতুন ধরন ও লক্ষ্য ঠিক করতে বেশ বেগ পাচ্ছে।

আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল তার কর্মীদের সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসতে বললে এর প্রতিবাদ জানান তাঁরা। টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা সশরীর অফিস করার আদেশ দিয়ে কর্মীদের ইমেইল পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, ‘আপনি যদি না আসেন, তাহলে আমরা ধরে নেব আপনি আর আমাদের সঙ্গে নেই।

মহামারি চলাকালে এবং এরপর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি পরিবর্তন করেছেন। মাইক্রোসফট এ ঘটনাকে ‘বড় রদবদল বলে অভিহিত করেছে। এর মধ্যে দেখা গেছে, যেসব কর্মীর জন্ম ১৯৯৭ সালের পর (তথাকথিত জেনারেশন জেড), তাদের মধ্যে চাকরি পরিবর্তন করার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক রদবদলের মধ্যে এক বছরের হিসাবে দেখা গেছে, লিংকডইনের সদস্যদের মধ্যে চাকরি পরিবর্তনের হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই জেনারেশন জেডের অন্তর্ভুক্ত।

রায়ান রোসলানেস্কি মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্র কর্মশক্তির প্রায় ৩০ শতাংশ হবে জেনারেশন জেডের। তাই পরিচালকদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। মাইক্রোসফট তাদের এই নতুন পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি চলমান এই পরিস্থিতিতে সহজ করে আনতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। তারা প্রতিষ্ঠানের কম বয়সী কর্মীদের সাহায্য করার দিকে মনোনিবেশ করছে।



মন্তব্য করুন