বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যুক্তরাষ্ট্র
১৩ নভেম্বর ২০২২ ০১:১৫ |আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১২:১৩
ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি
ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি

জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে অলৌকিক কমিটি বাণিজ্য বন্ধ করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আসল কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন দেলোয়ার-বাদল নেতৃত্বাধীন নিউ ইয়র্ক স্টেট বিএনপির নেতারা।

গত রবিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রিয় কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আগে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। দায়িত্বশীলদের বাস্তবতা বুঝে মাঠের কর্মীদের মতামত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন করতে হবে। বিদেশে বসে জুম মিটিংয়ে সভা করে পকেট কমিটি ঘোষণা করলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না। 

অধ্যাপক দেলোয়ার-বাদল নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ঘোষিত নিউ ইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির আহবায়ক সালেহ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে এবং স্টেট বিবিএনপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শিপন ও নিউ ইয়র্ক সিটি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। হাসিনা সরকারের বাধাবিপত্তি রোধ করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মানুষের জনশ্রোতই প্রমাণ করছে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় চায়। সরকার পতনে দেশ ও প্রবাসে বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

সভা শুরুর আগে ব্রুকলিনে সাম্প্রতি স্থাপিত ‘লিটল বাংলাদেশ (চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড ইন্টারসেকশন)-এ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, প্রধান বক্তা ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল, বিশেষ অতিথি ছিলেন গেটার ওয়াশিংটন জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. ইঞ্জিনিয়ার জিয়া উদ্দিন আহমেদ, গেষ্ট অব অনার ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক এবং আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নিউজার্সী ষ্টেট বিএনপির সভাপতি নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।

অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক ছাড়াও নিউ জার্সী থেকে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বক্তব্যের মাঝে মাঝে তাদের শ্লোগানে অনুষ্ঠান স্থল মুখরিত হয়ে উঠে।

সভায় আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন কচি, ব্রঙ্কস মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দস সালাম, নোয়খালী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র জাগপার সভাপতি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নোমান সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বাচ্চু, নিউ ইয়র্ক সিটি বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহিদ হেসেন ও জেদ্দা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মীর হোসেন, নিউ জার্সী ষ্টেট বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাবীর হোসেন, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল মুকুল, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ রিন্টু আলম, মোহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ মনির হোসেন, আশরাফুল হাসান, মোহাম্মদ সম্রাট ও মোহাম্মদ মহিন উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অতিথি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৭৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ আর আজকের ২০২২ সালের বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র একই অবস্থা। তাই ৭৫-এর সাতই নভেম্বরের ঘটনায় জিয়ার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে রক্ষা পেয়েছিলো, আজকের দিনে খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর নয় তার আগেই আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হবে ইনশাল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, সরকার নয় দেশ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই দেশ চলছে বলে বিএনপি সমাবেশ সরকার বন্ধ করতে পারছে না এবং এসব সমাবেশে লাখো জনতা পঙ্গপালের মতো ছুটে আসছে। আগামী দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নতুন করে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।

প্রধান বক্তা আখতার হোসেন বাদল বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। আমাদের নেতা আপোষহীন নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর বাইরে আমাদের কোন নেতা নেই, আমরা সবাই বিএনপি কর্মী। দেশ আজ আওয়ামী দু:শাসনের কবলে। তাই দেশ ও দেশের মানুষ বাঁচতে দেশে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ছাড়া সামনে কোন পথ নেই। এজন্য দেশ ও প্রবাসে ‘হাসিনা সরকার হঠাও এক দফা আন্দোলন চাই। সেই সাথে দলের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল নয়, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য পদে চাই। কোন অলৌকিক কমিটি বাণিজ্য বা পকেট কমিটি নয়। আমরা আসল কমিটি চাই, মাঠের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি চাই।

তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আর বীরের বেশে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। বিএনপির রাজনীতিই আমার জীবনের শুরু ও শেষ রাজনীতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় আখতার হোসেন বাদল তার মূল বক্তব্যের আগে নিউ ইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা হাত তুলে এই কমিটির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

ড. ইঞ্জিনিয়ার জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা। আমাদের পাসপোর্টে পরিচয় আমরা ‘বাংলাদেশী, ‘বাঙলী নই। তিনি বলেন, সময় আসছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর যেসকল নিপীড়ন-নির্যাতন, লাঞ্ছনা চালানো হয়েছে দেশের মানুষ তার পাই পাই হিসাব নেবে।

এম এ খালেক বলেন, আওয়ামী লীগ দাবী করে জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি, থখন তো জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন না। আর ৭৫ জিয়া ছিলেন অবিসংবাদিক একজন মেজর। যিনি সিপিাহী-বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করেন।

মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, যে স্বপ্ন দিয়ে দেশের জনগণ বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে তা আজো পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রকারী, দূর্নীতিবাজ, ফাসিস্ট।

মোহাম্মদ হোসেন কচি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে দেশে যে জন জাগরণ উঠেছে তা আওয়ামী লীগ চোখেও দেখছে, জাগরণের শব্দ কানেও শোনছে না। তাই আওয়ামী লীগের পতন ছাড়া তাদের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ৭৫-এর সাতই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব না ঘটলে বাংলাদেশ অন্যরকম হতো। তিনি বলেন, আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাসবাস করলেও মনে হয় আমরা স্বাধীন নই। তাই অগামী ১০ ডিসেম্বর আমাদের দেশটা নতুন করে স্বাধীণ করতে হবে। এজন্য প্রবাসীদের যার যার অবস্থান থেকে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সফল করতে সহযোগিতা করতে হবে।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ মানিক তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি সফল করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্যাপন করেন এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের অঙ্গীকারের পাশপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ও আখতার হোসেন বাদলের হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।

সভায় ঘোষিত নিউ ইয়র্ক ষ্টেট বিএনপির কমিটির কর্মকর্তারা হলেন: সভাপতি-সালেহ আহমদ মানিক, সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল মুকুল, সহ সভাপতি- শামসুল হক, শরিফুল আলম, প্রফেসর আহসান উল্লাহ মিন্টু, মোহাম্মদ মনির হোসেন, মোহাম্মদ মুরাদ রহমান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বাহার, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম, আবু নাছের ও মোহাম্মদ খায়রুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শিপন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- হোসাইন মোহাম্মদ মনির, মোহাম্মদ রিন্টু আলম, মোহাম্মদ সম্রাট, মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মীর হোসেন, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ফরহাদ, মোহাম্মদ মোহন পাটোয়ারী, ফয়সাল আহমদ পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক-আশরাফুল আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক- কামরুজ্জামান লাবলু, মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ রিপন ও মাসুদ মিয়া, প্রচার সম্পাদক-তৈমুর রহমান এবং সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, জাকির হোসেন, মোক্তার হোসেন, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ মোতায়ের হোসেন জয়, আব্দুল জলিল, আবুল খায়ের, মোহাম্মদ রিংকু, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহেন শাহ, মোহাম্মদ ইমাম আলী, মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ হায়দার আলী, মোহাম্মদ রাজু আহমদ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান শিপন। উল্লেখ্য, আলোচনার ভিত্তিতে কোষাধ্যক্ষ পদ পরবর্তীতে পূরণ করা হবে।

এদিকে বিএনপি নেতা আখতার হোসেন বাদল জানান, গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের সাথে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়ে পর তিনি (আব্দুস সালাম) আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। যার শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। জানা গেছে, আব্দুস সালামের সাথে অনিষ্ঠিত সভায় অধ্যাপক দেলেঅয়ার হোসেন, আখতার হোসেন বাদল ও সালেহ আহমদ মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর