আপনার শিশুর কি নাক বন্ধ থাকে?
প্রতীকী ছবি
অ্যাডিনয়েড বড় হয়ে গেলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাতসহ শিশুদের মারাত্মক কিছু শারীরিক জটিলতা হতে পারে। শীতের সময় এ সমস্যা বাড়তে পারে।
নাকের পেছনে টনসিলের মতো সাধারণ কিছু লিম্ফয়েড টিস্যু থাকে। এটি যদি কখনো বড় হয়ে যায়, তাহলে নাকের পেছনের শ্বাসনালিকে বন্ধ করে দিতে পারে। একে বলে অ্যাডিনয়েড বড় হওয়ার সমস্যা, যা সাধারণত শিশুদের বেশি হয়। শীতের সময় এর জটিলতা বাড়তে পারে।
লক্ষণ
শিশুদের অ্যাডিনয়েড বড় হলে কিছু লক্ষণ
প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে মনে করতে হবে, তার অ্যাডিনয়েড বড়ো হয়ে সমস্যা তৈরি
হচ্ছে। যেমন—
শিশুর নাক বন্ধ থাকে, সব সময় সর্দি লেগে
থাকে, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়, সব সময় মুখ হাঁ করে থাকে, ঘুমের সময় শ্বাসকষ্টে ভোগে, মুখ
হাঁ করে ঘুমায়, নাকে সর্দি লাগলে মানুষ যে স্বরে কথা বলে শিশু সেই স্বরে কথা বলে, মুখ
দিয়ে লালা পড়ে, খাওয়া দাওয়ায় যথেষ্ট অরুচি থাকে, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস
বন্ধ হয়ে যায়, ঘুম ভেঙে গেলে জোরে জোরে শ্বাস নেয়, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। কানের পেছনে
একটা টিউব থাকে, যার ওপর চাপ পড়লে শিশুর কানের সমস্যা হয়, কানে কম শোনে। উচ্চ ভলিউমে
রেডিও-টেলিভিশন শোনে। কানে ইনফেকশন হতে পারে, মাঝেমধ্যে কান ব্যথা হয়, পুঁজ পড়তে পারে।
সাইনোসাইটিস হতে পারে।
পর্দার পেছনে মধ্যকর্ণে পানি জমে, যাকে
অটাইটিস মিডিয়া উইথ ইফিউশন বলে। অনেক সময় মধ্যকর্ণে ইনফেকশনও হতে পারে।
জটিলতা
অ্যাডিনয়েডের কারণে বা সঠিক সময়ে চিকিৎসা
না করালে কিছু জটিলতা হতে পারে। যেমন—
সব সময় বা মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণে
অনেক সময় শিশুর মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়। একে বলে ‘অ্যাডিনয়েড ফেসিস’। অ্যাডিনয়েড
ফেসিসের চেহারার শিশুকে দেখতে অনেকটা হাবাগোবা বা বোকা টাইপের মনে হয়। তাদের মুখ দেখলেই
বোঝা যায়। কেননা মস্তিষ্কের পুষ্টি হলো অক্সিজেন। আর এসবের অভাবে শিশুদের আইকিউ কমে
যায়, তারা বোকা বোকা হয়, বুদ্ধি লোপ পায়। ঘুমের ভেতর যেহেতু অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়,
ফলে ব্রেনেও অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়। এতে মস্তিষ্ক হাইপক্সিক ড্রাইভে ভোগে। দাঁত
উঁচু হতে পারে, তালু ওপরে উঠে যেতে পারে। টনসিলও বড় হয়ে পুঁজ জমে জটিলতা হতে পারে।
শিশুর খেতে কষ্ট হয়, খেতেও অনেক সময় লাগে। পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়, শারীরিক ও মানসিক
বিকাশ ব্যাহত হয়। নাকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না বলে নাক ছোট হয়ে যেতে পারে। এ রোগের
মারাত্মক জটিলতা হিসেবে বাতজ্বর, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিওর, দীর্ঘস্থায়ী
কিডনির অসুখ ইত্যাদি হতে পারে।
যাদের হয়
সাধারণত তিন থেকে চার বছরের শিশুদের এটা বেশি হয়। তবে ছয়-সাত বছরের শিশুদেরও
হতে পারে। ১০-১১ বছরের পর অনেক ক্ষেত্রে অ্যাডিনয়েডের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে বা ছোট
হতে থাকে। এ রকম না হওয়া বরং খারাপ লক্ষণ।
পরীক্ষা
কোনো শিশুর অ্যাডিনয়েড আছে কি না বা অ্যাডিনয়েড বড় হয়েছে কি না এটা উপরোক্ত
কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানা
যায়। যেমন—সিম্পল এক্স-রে সফট টিস্যু নেসোফেরিংক্স ল্যাটারাল
ভিউ (X-ray nasopharynx lateral view)। এই এক্স-রে করালে ঠিক কতটুকু শ্বাসনালি বন্ধ
হয়ে গেছে সেটা ভালোভাবে বোঝা যাবে। এ ছাড়া এন্ডোসকপি এবং সিটি স্ক্যান করেও জানা যায়।
চিকিৎসা
ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ অথবা অপারেশন করে অ্যাডিনয়েড ফেলে দেওয়া—এই দুভাবে অ্যাডিনয়েডের
চিকিৎসা করা যায়।
অপারেশন
অ্যাডিনোটনসিলেকটমি: শিশুর অ্যাডিনয়েডের সমস্যা জটিল মনে হলে, বেশি বড়
হয়ে গেলে এবং শ্বাসনালিকে বাধাগ্রস্ত করলে এবং কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অপারেশন করে ফেলাই
ভালো। টনসিল ও অ্যাডিনয়েড দুটিই অপারেশনের মাধ্যমে একত্রে ফেলে দেওয়া ভালো, যাতে পরবর্তী
সময়ে জটিলতা এড়ানো যায়। একে বলে ‘অ্যাডিনোটনসিলেকটমি’।
কবলেশন: প্রচলিত পদ্ধতিতে অপারেশন না করিয়ে ইদানীং ‘কবলেশন মেথড’ বেশ জনপ্রিয়
হয়ে উঠেছে। এটা রক্তপাতহীন সর্বাধুনিক পদ্ধতির অপারেশন। এতে কাটা ঘা দ্রুত শুকায়, ব্যথা
কম থাকে ইত্যাদি।
ওষুধের মাধ্যমে
অ্যাডিনয়েড যদি অল্প পরিমাণে বড় হয়, তাহলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা
যায়। আবার অপারেশন করাতে কেউ অনিচ্ছুক হলে সে ক্ষেত্রে কিছু বিকল্প চিকিৎসা যেমন—নাকের স্টেরয়েড
ড্রপস, লো ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন ইত্যাদি ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে অ্যাডিনয়েডের সঙ্গে টনসিলাইটিস থাকলে অপারেশন করাটাই যুক্তিযুক্ত।
প্রতিরোধে করণীয়
১ফ্রিজের পানি বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান না করা।
২.আইসক্রিমজাতীয় খাবার বন্ধ করা।
৩.বিছানার মাথার দিক কিছুটা উঁচু রাখা।
৪.চিত না হয়ে বরং এক কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করা।
৫.জ্বর, গলা ব্যথা, অ্যালার্জি থাকলে চিকিৎসা করা।
৬.মেঝেতে না শোয়া বা ঠাণ্ডা না লাগানো।
৭.নাকের দেয়াল বাঁকা থাকলে সঠিক চিকিৎসা করা।
৮.পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা।
৯.স্থুলকায় হলে ওজন কমানোর চেষ্টা করা।
১০.ঘিঞ্জি পরিবেশ এড়িয়ে চলা বা অনেক শিশু একসঙ্গে বসবাস না করা।
মন্তব্য করুন