আস্থাশীল, টেকসই পুঁজিবাজার গড়তে চাই

বসুন্ধরা গ্রুপ ও এবিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর
রূপকথা নয়, রূপান্তরের বাংলাদেশ। ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বৃত্ত ভেঙে, সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে বর্তমান বাংলাদেশ অপরাজেয়-অপ্রতিরোধ্য এক নতুন বাংলাদেশ।
শ্যামল-সুন্দর নদীতীরের কোটি
মানুষের অদম্য শক্তির উন্মাদনাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে রূপান্তরের বাংলাদেশের
নতুন পরিচয়। অর্থনীতি, উদ্যোগ, শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে
প্রশ্নাতীত সাফল্যের হাত ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন এখন
বাংলাদেশ।
তবে মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাত
শেষ না হতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির থাবা পুরো
বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছে। এর উত্তাপ লেগেছে বাংলাদেশেও। এরই মধ্যে
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট অর্থনীতিকে চরম
ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাপনে।
বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। তাদের আয় নেই, অথচ খরচ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতি আর বাড়তি খরচের এই
ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আয়ের কেন্দ্র হতে পারত
পুঁজিবাজার। একটি পরিণত, আধুনিক ও
স্থিতিশীল পুঁজিবাজার থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও একে মোকাবেলার শক্তি পেত মানুষ।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সেটি করা সম্ভব
হয়নি।
তবে এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি।
আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর
সোনার বাংলা গড়তে হলে আর্থিক খাতের অন্যতম অংশ পুঁজিবাজারকে আমূল বদলে দিতে হবে। এ
অবস্থায় ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসতে চাই আমরা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বসুন্ধরা গ্রুপের
অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক
পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার আগ্রহ দেখায়। আনন্দের বিষয় হলো, আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছি।
এখন আমাদের লক্ষ্য থাকবে, কিভাবে এই
পুঁজিবাজারকে সর্বসাধারণের জন্য সমান সহায়ক আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা
যায়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী
হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের ভালো-মন্দ বিবেচনায় রাখে। আমাদের স্লোগানই হলো ‘দেশ ও মানুষের
কল্যাণে’। আমার বড় ভাই বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর এই
স্লোগানটি ঠিক করে দিয়েছিলেন।
সেই থেকে আমরা সবাই এই বাক্যটিকে
ব্রত হিসেবে নিয়েছি। আমাদের একটি বড় লক্ষ্য হলো, দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করা। নানাভাবে আমরা তা করে যাচ্ছি। তবে আর্থিক খাত
তথা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে।
আশা করি,
এখানেও আমরা লক্ষ্য পূরণে সমর্থ হব।
এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে
দিয়েছি। সিএসইকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজে
লাগানো হচ্ছে। বিশেষ করে আধুনিক কারিগরি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে উন্নত ও
প্রযুক্তিবান্ধব করে পুঁজিবাজারকে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়া
আমাদের অন্যতম লক্ষ্য, যাতে করে মানুষ
তাদের সঞ্চিত ৫-১০ হাজার টাকাও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে। এখান থেকে মুনাফা
করতে পারে। কোনো ব্যাংকেও যেন অলস টাকা পড়ে না থাকে। অলস টাকা অর্থনীতির জন্য
স্বস্তিদায়ক বিষয় নয়।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের
মানুষ ব্যাংক-বীমার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে, যা তাদের আয়ের ভিন্ন একটি উৎসও বটে। এই আয় থেকে বছর শেষে বা
হলিডেতে ঘুরতে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে পারে তারা। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ ও
২০১০ সালের বড় দুটি ধসের ঘটনা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে।
মানুষ চরমভাবে ঘাবড়ে গেছে। এমনকি পুঁজিবাজারের নাম শুনলেই অনেকের মনে নেতিবাচক
প্রশ্নের উদয় হয়। বেশির ভাগ মানুষই এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আস্থা পায় না। এমনকি
বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। মূলত পর্যাপ্ত
তথ্যের ঘাটতি, দুষ্টচক্রের কারসাজির ভীতি ও
অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।
দুটি ঘটনা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের
আতঙ্কগ্রস্ত করলেও তাদের আস্থা ফেরানোর খুব কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আমরা
সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা করে, সহজ পদ্ধতিতে
মানুষের মনে হারানো ভরসার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে চাই। তারা যেন আবারও পুঁজিবাজারকে
বিশ্বাস করে, বিনিয়োগ করে। এটি যেন তাদের
কায়ক্লেশের সংসারজীবনে নিয়ামকের ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)
স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে এবিজি লিমিটেড সবার আগে তথ্যের
সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করবে। পাশাপাশি সিএসইর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মাধ্যমে
পুঁজিবাজারের নিয়মিত লেনদেনে নজরদারির ব্যবস্থা করবে। যেন কেউ কৌশলে
বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে। এ জন্য অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক
সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহযোগিতা প্রয়োজন
হবে।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের
ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) দৈনিক গড়ে ২২ হাজার ৭২৪ কোটি রুপি লেনদেন হয়।
অথচ বাংলাদেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটিরও নিচে। এখন
অনেকেই বলবেন, তাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি, ওদের অর্থনীতির পরিধি বড়, ওদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেশি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যাও
তো সাড়ে ১৬ কোটি ছাড়িয়ে। আমরা তো বিনিয়োগের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের দিক থেকেও
পিছিয়ে আছি! তাহলে আমাদের লেনদেন কেন তাদের সাত ভাগের এক ভাগ হবে না আমাদের
পুঁজিবাজারে কেন বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে না আমাদের পুঁজিবাজারে
কেন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না কেন আস্থা ফেরানো যাবে না আমি মনে করি এটা সম্ভব।
এনএসই নিয়ে একটি তথ্য জানাই, ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বের বৃহত্তম
‘ডেরিভেটিভ এক্সচেঞ্জ’ হয়েছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিউচারস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (এফআইএ) পরিচালিত
পরিসংখ্যানে ওই তথ্য উঠে এসেছিল। পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জেসের
পরিসংখ্যানেও ট্রেডের সংখ্যার ভিত্তিতে নগদ ইকুইটিতে এনএসই বিশ্বের চতুর্থ স্থানে
রয়েছে। আমরা আছি তালিকার একেবারে শেষের দিকে। এর কারণ হচ্ছে পরনির্ভরশীলতা।
প্রযুক্তির জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। নতুন কিছু
শুরু করতে গেলে প্রথমেই বলা হয়, আমাদের দিয়ে
সম্ভব নয়। কিন্তু কেউ তো মায়ের গর্ভ থেকে সব কিছু শিখে আসে না। নতুন কাজ, নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অভিজ্ঞতা। প্রয়োজনে আমরা কাউকে পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজ আদায় করে
নেব। কিন্তু কাজটির দায়িত্বে আমাদের থাকতেই হবে। না হলে আমাদের দেশে আয় করে, এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়ে যাবে বহুজাতিক
কোম্পানিগুলো।
খেয়াল করে দেখুন, বাংলাদেশে ব্যবসারত টেলিকম কোম্পানিগুলোর মধ্যে
গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা আট কোটি ৪০ লাখ, রবি আজিয়াটার গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ কোটি ৪৮ লাখ, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের তিন কোটি ৮৫ লাখ। সেখানে বাংলাদেশ
সরকারের মালিকানাধীন টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের গ্রাহকসংখ্যা মাত্র ৬৭ লাখ।
বাংলাদেশ সরকারের আইনের পরিপালন করে অন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো টেলিকম ব্যবসা করে
কোটি কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে গেলেও টেলিটক সেই প্রতিযোগিতায় নেই। এর মূল কারণই হলো
‘আমরা পারব না’—এই ভীতি। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রতি আমাদের বাড়তি
আগ্রহ।
বর্তমানে দেশে সীমাহীন ডলারসংকটের
পেছনেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দায়ী। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে হাজার কোটি টাকার
মুনাফা করলেও নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত। ফলে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ
বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেওয়া বিনিয়োগের সুবিধার অর্ধেকও যদি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে
দেওয়া হতো, তবে আজকের পরিস্থিতি অন্য রকম
থাকত। কারণ, আমরা ব্যবসা থেকে যে মুনাফা করি
তা আবার দেশেই বিনিয়োগ করি। দেশীয় শ্রমবাজারই আমাদের প্রধান শক্তি।
বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই আমদানি
বিকল্প দেশীয় পণ্য তথা দেশজ উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করে আসছে। দেশের মানুষের প্রয়োজন
মেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অসংখ্য পণ্য এখানে উৎপাদন করে আসছে। শুধু তা-ই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বহু পথ খুলেছে। দেশের ক্রান্তিকালে
অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশের আইন ও নীতিমালার প্রতি
শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ভূমিকা রাখছি। একইভাবে পুঁজিবাজারেও
আমরা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চাই, যাতে সাধারণ
বিনিয়োগকারীরা আবার তাদের হারানো আস্থা ফিরে পায়।
কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা
ফেরানোর বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সেরকম পদক্ষেপ নিতে চাইলে গেল বছরই ছিল
অত্যন্ত মোক্ষম সময়। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়ে। ওই
পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের
মধ্যে দর বেড়েছিল ৩০০টির। এর মধ্যে ৭০টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছিল ১০০
শতাংশের বেশি। পুঁজিবাজারের এমন নজিরবিহীন উত্থানের পরও আমরা বিনিয়োগকারীদের
আগ্রহী করে তুলতে পারিনি। বা যারা ওই সময় পুঁজিবাজারে এসেছে তারাও পরবর্তী সময়ে
জুজুর ভয়ে সাইডলাইনে চলে গেছে। কিন্তু আমরা যদি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকে নিরাপদ
করতে পারতাম তবে মধ্যবিত্তদের বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে বহুজাতিক
কোম্পানিগুলো মুনাফা করে হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে
বিদেশি বিনিয়োগের তেমন আধিক্য নেই। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে সিএসইতে মাত্র এক কোটি
৪১ লাখ টাকার বিনিয়োগ এসেছে। একই সময়ে ডিএসইর বিদেশি বিনিয়োগ নেমে আসে গেল সাত
বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। সিএসইতে কমোডিটি
এক্সচেঞ্জ পাশাপাশি ডেরিভেটিভ ও অপশন মার্কেটও চালু করার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
আজ যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু হচ্ছে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে তিন বছর।
৩৬ মাস পর আপনারা নতুন এক সিএসই দেখবেন। যেটা হবে আরো আধুনিক, আরো নিরাপদ। থাকবে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড অটোমেশন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের
সঙ্গে সঙ্গেই তা সেটলমেন্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ক্রেতা শেয়ার বুঝে পান, আর বিক্রেতা বুঝে পান অর্থ। কিন্তু আমাদের সেটলমেন্ট সাইকেল
এখনো টি-২। অর্থাৎ শেয়ার কেনার দুই দিন পর শেয়ারটি বিক্রি করা যায়। একইভাবে শেয়ার
বিক্রির টাকাও দুদিন পর বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়। মাঝের সময়ে টাকাটা থাকে
ব্যাংকিং চ্যানেলে। এই সময়ে অর্থগুলো ব্যবহার করে মুনাফা হাসিল করছে ব্যাংকগুলো।
অথচ বিনিয়োগকারীরা এই অর্থের কোনো সুবিধাই পান না। আমাদের ট্রেড সাইকেল পরিবর্তন
করা উচিত। এবিজি লিমিটেড এই অবস্থা পরিবর্তনে কাজ করবে। বিনিয়োগকারীরা নিজেদের
ইচ্ছামতো যখন খুশি শেয়ার কিনবেন, যখন খুশি বিক্রয়
করবেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসবেন।
সেকেন্ডারি মার্কেটের পাশাপাশি
আমাদের প্রাইমারি মার্কেট ও স্মলক্যাপ (ছোট মূলধনী কোম্পানি) মার্কেটেও সংস্কার
আনতে হবে। কারণ, নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলো ভুয়া
প্রসপেকটাস দাখিল করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এর সঙ্গে ইস্যু
ম্যানেজার ও অডিটকোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু সঠিক
তদন্তের মাধ্যমে এই ইস্যুগুলো বিনিয়োগকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে অনেক
প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আসার পর দেউলিয়া হয়ে গেলেও বিনিয়োগকারী অর্থ ফেরত পাননি। এমন
পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। এবিজি
লিমিটেড ও সিএসই যৌথভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবে।
দেশে সরকারি-বেসরকারি বহু
কোম্পানি হাজার কোটি টাকা মুনাফা করলেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে
পুঁজিবাজারে আসছে না। কারণ পুঁজিবাজারে এলে বছরে চারটি প্রান্তিকে আর্থিক হিসাব
দিতে হবে,
বিনিয়োগকারীদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ও দেখাতে হবে। বছর শেষে করতে
হবে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ফলে ইচ্ছা করলেও কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিরা অর্থপাচার কিংবা আত্মসাৎ করতে পারবেন না। স্বচ্ছতার আওতায় আসতে হবে। এটা
তাঁরা করতে চান না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বড় মুনাফাধারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর সুবিধা কমিয়ে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত। এতে পুঁজিবাজারের মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গভীরতাও
বাড়বে। বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে আগ্রহ পাবে।
বড় কোম্পানিগুলো যেমন পুঁজিবাজারে
আসতে চায় না, ঠিক তেমনি কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে
আসতে চাইলে তাদের নানা চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। যেমন ধরুন—কোনো কোম্পানি ২০২০ সালের
ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ উত্তোলনের জন্য বিএসইসিতে আবেদন
করেছে। কিন্তু কোম্পানিটিকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালে। কিন্তু এর
মধ্যেই কোম্পানি ব্যাংকে ধারদেনা করে সম্প্রসারণের কাজ শেষ করেছে। এমনটি হওয়া উচিত
নয়। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা উচিত। পাশাপাশি
শুধু এনআইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকা
উচিত। এতে করে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হবেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও বিনিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ করা উচিত। তাঁদের পুঁজিবাজারে
আনতে শক্তিশালী একটি ইউনিট খুলতে হবে। এই ইউনিট থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য প্রলুব্ধ করা হবে। এ ছাড়া দেশের
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ কৌশল
শেখানোর পাশাপাশি তাঁদের সহজ শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে।
মোটাদাগে, বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের সোপানে নতুন নতুন সাফল্যের ভিত
রচনা করছে, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি
সুষম,
সুশৃঙ্খল ও টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হবে। আর এই লক্ষ্যে
যত ধরনের সেবা ও সহায়তা প্রয়োজন সব নিয়েই বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
বসুন্ধরার এবিজি লিমিটেড।
উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি আজ
ডিজিটাল অর্থনীতি। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০৪১ পূরণের লক্ষ্যে মূল ভূমিকা রাখবে এই
ডিজিটাল অর্থনীতি। আর এ ক্ষেত্রে এবিজি লিমিটেড পুঁজিবাজারে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের
মাধ্যমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
পুঁজিবাজার ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আমরা চাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে, যার মাধ্যমে অংশীদার হতে চাই ডিজিটাল অর্থনীতির বাংলাদেশ
গড়তে।
সায়েম সোবহান আনভীর
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুন্ধরা গ্রুপ ও এবিজি লিমিটেড
মন্তব্য করুন