শাকিব-অপু ও সন্তানের ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করলেন বুবলী (ভিডিও)
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এসে শাকিব-অপু ও সন্তানের ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন নায়িকা শবনম বুবলী। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া
শাকিব খানের কাছ থেকে শবনম বুবলী ‘ডায়মন্ডের নাকফুল’ উপহার পাওয়া নিয়ে ‘অপু-শাকিব-বুবলী’ এই তিনজনকে ঘিরে ত্রিমুখী আলোচনায় সরব সিনেপাড়া। কথা ছিল, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছিলেন নায়িকা শবনম বুবলী।
তবে সেই সংবাদ সম্মেলন করেননি তিনি। শুধু
তাই নয় বুবলী এড়িয়ে চলছিলেন সংবাদকর্মীদেরও। এরপর সবাই প্রায় ধরেই নিয়েছিল, হয়তো দ্বন্দ্ব
মিটমাট করে নিয়েছেন তারা।
কিন্তু বিষয়টি মোটেও সেখানে থেমে যায়নি।
রোববার (০৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তায় অবস্থান পরিষ্কার করলেন বুবলী।
সেখানে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে তার নিজের, নায়িকা অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক ও সন্তানের
বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
ক্যারিয়ারের প্রথম পর্যায়ের কথা টেনে বুবলী
বলেন, আমি ২০১৬ থেকে কাজ করছি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী, তার
সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। উনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। ওনার মাধ্যমেই
আমার ফিল্মে আসা। ওই সময়ে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের কেউ কি জানতেন ওনার আগের কোনো সম্পর্ক
নিয়ে? এটা কিন্তু আমরা কেউই জানতাম না।
বুবলী জানালেন, শাকিব খান নিজেকে তার কাছে
সিঙ্গেল হিসেবেই উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সুবাদেই তাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়। কিন্তু
পরবর্তীতে যখন অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে এসে বোমা ফাটালেন, অভিযোগের তীর ছুটে আসে
বুবলীর দিকেই।
ওই সময়টা নিয়ে বুবলীর ভাষ্য, ২০১৭-তে যখন
বিষয়গুলো (অপু বিশ্বাসের সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসা) সামনে আসলো, তখন শাকিব খান নিজেও
অবাক হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে যিনি সম্পর্কে ছিলেন, অপু বিশ্বাস, উনি অনেক সিনিয়র আমার
থেকে। অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। তাকে অবশ্যই আমি কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার
সঙ্গে কখনই আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি লাইভে আসার আগে হঠাত আমাকে ফোন
করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি কেন! ওই ব্যবহারের জন্য
আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ওই বাজে ব্যবহারের কথা তিনি নিজেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন।
বুবলী বলেন, আমার কষ্টের জায়গা ছিলো, আমি
তো কিছুই জানি না। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিলো, সেটা তো না। কেন আমাকে জড়িয়ে
এভাবে বলা হচ্ছিলো! সে কারণেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে শাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন
বুবলী। এ বিষয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, আমি শাকিব খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পরে তিনি
অনেক ইমোশনালি আমাকে বলেন যে, ‘অনেক দিন ধরেই কথাগুলো তোমাকে বলতে
চাচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তুমি তো এটাতে জড়িত নও। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এক
বছর ধরে আমার যোগাযোগ নেই।’ এটা অপুদি নিজেও লাইভ প্রোগ্রামে
বলেছিলেন। আপনারা অনেকেই জানেন, শাকিব খানের কথা অনুযায়ী অপু বিশ্বাসকে তিনবার অ্যাবর্শন
করতে হয়েছিলো। চতুর্থবার বাধ্য হয়েই তিনি সন্তান নিয়েছিলেন। এইসব ঘটনায় তো আমি নেই।
তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারো সংসার
ভেঙেছে? আমার কারণে কারো সংসার, সম্পর্ক ভাঙেনি। আমি স্পষ্ট করে দর্শকের উদ্দেশে বলতে
চাই।
বুবলীর স্পষ্ট বক্তব্য, তাদের ডিভোর্স
হয়ে যাওয়াটা, সেটাও তো সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর মানুষ।
এটা সম্ভব যে, কারো দ্বারা প্ররোচিত! কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি
সম্পর্কে যুক্ত হন, সেটার জন্য কি ওই নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই
নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তারা
যদি সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চায়, এটার জন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী? শাকিব খান
নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি এই সম্পর্কে (অপু বিশ্বাসের সঙ্গে) সুখী নন। তিনি তার জায়গা
থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলবো না।
এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই।
শাকিব-অপুর সন্তান জয়ের জন্মদিনে নিজের
বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে আনেন বুবলী। এ নিয়ে বুবলী বলেন, অনেকের এই প্রশ্ন আছে যে,
আমি কেন হঠাত করে জয়ের (শাকিব-অপুর ছেলে) জন্মদিনে আমার বেবি বাম্পের ছবি দিলাম। দেখুন,
জয়ের ব্যাপারে আমি আমার স্বামী শাকিব খানকে কতটা পজিটিভলি দেখতে বলি, এটা উনি জানেন
এবং ওনার আশেপাশে যারা কাছের মানুষ আছেন, তারা জানেন। বিষয়গুলো আমি কখনো সামনে আনতে
চাইনি। কিন্তু অনেকেই খুব বিরক্ত হচ্ছেন যে, আমি কেন এসব নিয়ে রেসপন্স করি না। অনেকের
সম্মানের কথা ভেবে আমি আজকেও অনেক কিছু বলছি না। জয়কে আমি কতোটা সাপোর্ট করি, এটা শাকিব
খান খুব ভালো করেই জানেন। ওর সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য সবরকম পরামর্শ আমি দিয়েছি।
আমার বেবি বাম্পের ছবি যে ওর জন্মদিনে ছাড়া, বিষয়টা এভাবে ভেবে করিনি আমি। যতদূর জানি,
জয় এবার ছয় বছরে পড়েছে। তো এর আগে অনেকগুলো বছর গেছে, আমি তো কোনো জন্মদিনে এমনটা করিনি।
সবসময় ওর জন্য ভালোবাসা, দোয়া দিয়ে এসেছি। আমিও তো একটা মানুষ, আমারো তো কষ্ট থাকতে
পারে। আমি তো শুধু বেবি বাম্পের ছবি দিয়েছি। কাউকে দোষারোপ করেও তো কিছু বলিনি। শুধু
নিজের আবেগের জায়গা থেকে একটা বিষয় শেয়ার করেছি।
ভিডিওর একদম শেষের অংশে বুবলী বলেন, কিছু
জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন
বিষয়ে ইনভলব করে ফেলেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ। ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা
চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে।
আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারো বিষয়ে
কোনো অভিযোগ করিনি, আজকেও করছি না। না হলে ও হয়তো কখনো কোনো সময় প্রশ্ন করবে, মা তুমি
তো কোনো কথা বলোনি কখনো।
সন্তান শেহজাদের উদ্দেশে বুবলী বলেন, বাবা শেহজাদ, মা হয়ে তোমার পাশে সারা জীবন থাকব না বাবা। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি এবং করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, তোমাকে বড় করা। আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও বাবা এবং একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে সব সময় তোমাকে সেরাটা দিতে পারি না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
মন্তব্য করুন