মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইন্দোনেশিয়ায় বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক
৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১১ |আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক নিষিদ্ধের একটি আইন অনুমোদন দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট। নতুন এই আইনে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তবে নতুন ফৌজদারি এই আইন আগামী তিন বছর কার্যকর হবে না।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দেশটির পার্লামেন্টে নতুন এই আইন পাশ হয়। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম এই দেশটির পাস হওয়া নতুন এই আইনের সমালোচকরা বলেছেন, এটি দেশের মানুষের স্বাধীনতার ওপর এক ধরনের আঘাত।

একই আইনে দেশটির প্রেসিডেন্টকে অপমান এবং রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের বিপরীত মতামত প্রকাশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জাকার্তায় দেশটির পার্লামেন্টের বাইরে অল্প কিছু মানুষ এই আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করেছেন।

 

আইনটি ইন্দোনেশীয় নাগরিক এবং দেশটিতে বসবাসরত বিদেশি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এতে বেশ কয়েকটি নৈতিকতা আইনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনে অবিবাহিত দম্পতিদের একসাথে বসবাস এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে অবৈধ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, আইনটি ইন্দোনেশিয়ার নারী, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্য এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

বিয়ের বাইরে অন্য কারও সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে কোনও ব্যক্তির সঙ্গী অথবা তার বাবা-মা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। নতুন আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বেআইনি শারীরিক সম্পর্কের দায়ে ওই ব্যক্তিকে কারাগারে যেতে হবে।

 

আইনের নতুন মানহানি অনুচ্ছেদে দেশটির প্রেসিডেন্টকে অপমান এবং জাতীয় মতাদর্শের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশকে বৈআইনি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দেশটির আইনপ্রণেতারা বলেছেন, তারা জনস্বার্থে বাকস্বাধীনতা এবং প্রতিবাদের অধিকারের সুরক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আইনের নতুন নতুন ধারাগুলো ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের মানবাধিকারের জন্য এক বিপর্যয়। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থার এশীয় অঞ্চলের পরিচালক এলাইনি পিয়ারসন ব্রিটিশ ভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, আধুনিক মুসলিম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের তুলে ধরা একটি দেশের জন্য এই আইন বড় ধরনের ধাক্কা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাকার্তা-ভিত্তিক গবেষক অ্যান্দ্রিয়াস হারসানো বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় লাখ লাখ দম্পতি আছেন, যাদের বিয়ের সনদ নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী অথবা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে এই চর্চা বেশি রয়েছে। কারণ তারা নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

 

উল্লেখ্য, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্টে এ আইনটি প্রথম উত্থাপন করা হয় ২০১৯ সালে। তবে সে বছর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকে বিক্ষোভ করেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। তাদের বিক্ষোভের কারণে জাকার্তা কার্যত অচল হয়ে যায়। যদিও ওই খসড়া আইনে শুধুমাত্র বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথাই উল্লেখ ছিল না। জাতীয় পতাকা অবমাননা, প্রেসিডেন্টকে অবমাননা করলে শাস্তি এবং গর্ভপাত করলে চার বছরের জেলের বিধান রেখে এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। বিক্ষোভের মুখে সেবার পিছিয়ে যায় ইন্দোনেশিয়ার সরকার। কিন্তু এর তিন বছর পর আইনটি দেশটির সংসদে পাস হয়েছে।

 



মন্তব্য করুন