জানুয়ারিতে একদিনও স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি ঢাকাবাসী
পুরোনো ছবি
অস্বাস্থ্যকর বায়ু গ্রহণ করেই বছর শুরু করেছেন ঢাকার বাসিন্দারা। জানুয়ারি মাসের একটি দিনও নির্মল বাতাস পাননি তারা। সুইজারল্যান্ডের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘এ কিউ এয়ার’-এর তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে একদিনের জন্যও অস্বাস্থ্যকর মান থেকে নামেনি ঢাকার বায়ু। বরং বেশ কয়েকদিনই ঢাকার বায়ুমান ছিল চরম অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিষাক্ত প্লাস্টিকের কণা।
এ কিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ জানুয়ারি
ঢাকার বায়ুমান ১৫৭ একিউআই সূচকে পৌঁছালেও ১৮ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৬ দিন এই
মান ছিল ২০০-এর কাছাকাছি। এর মধ্যে ২২ জানুয়ারি সর্বোচ্চ ২৭৯-তে পৌঁছায়। এরপর ২৪ জানুয়ারি
বৃষ্টি শুরু হলে ঢাকার একিউআই-ও কিছুটা কমে আসে। তারপরও এই বায়ুমান ১৭০-এর নিচে নামেনি।
অর্থাৎ বৃষ্টি সত্ত্বেও ঢাকার বায়ুমান এক দিনের জন্যও স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরে আসেনি।
বায়ুমানের ক্ষেত্রে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক
তথা একিউআইয়ের মান ৫০ পর্যন্ত হলে তাকে স্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত
থাকলে তা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের ধরা হয় যদিও ব্যক্তি বিশেষে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত মাত্রাকে বলা হয় অরেঞ্জ লেভেল যা সাধারণ মানুষের জন্য খুব একটা
ক্ষতিকর না হলেও কারো কারো স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। ১৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে
তা অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর এই মান ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত চরম অস্বাস্থ্যকর।
আর একিউআই ৩০০-এর বেশি হলে সেটিকে বিপর্যয়কর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ঢাকার বায়ুর মান জানুয়ারি মাসে কোনোদিনই
১৫০-এর নিচে নামেনি। অর্থাৎ বছর প্রথম মাসে একটি দিনও স্বাস্থ্যকর বায়ু পায়নি রাজধানী
শহরের বাসিন্দারা।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন দাঁড়ায়, ঢাকার বায়ুর
মান এত নিচে নেমে গেল কেন? নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু নেওয়ার ফলে কী ধরনের সমস্যা
হচ্ছে? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথই বা কী?
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক এবং বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মূলত তিনটি কারণে জানুয়ারি মাসে ঢাকার বায়ুমান
খুব খারাপ অবস্থায় ছিল।
প্রথমত, গত ডিসেম্বরে মেট্টোরেলের উদ্বোধনের
কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। ফলে গত ৭ বছরের মধ্যে ডিসেম্বরে বায়ু মান সবচেয়ে ভালো ছিল।
খোড়াখুড়ির কাজও ওই সময় বন্ধ ছিল। জানুয়ারির শুরুতে এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে ১০০টি
জায়গায় খোড়াখুড়ি শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা জানি
শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে বায়ু দূষণ বাড়ে। ডিসেম্বরে উল্টো গরম পড়েছে। জানুয়ারির শুরু থেকে
শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে প্রতিবেশী দেশ থেকে দূষিত বাতাস এসেছে। পাশাপাশি খোঁড়াখুঁড়ির
কারণে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটাও নেওয়া হয়নি।
এই বিশেষজ্ঞের মতে তৃতীয় কারণ হলো, জানুয়ারিতে
বাতাসের গতিবেগ ছিল ১২ কিলোমিটারের মতো। ফলে দূষিত বায়ু নিম্নস্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নগরবাসীকে পুরো মাসজুড়েই দূষিত বায়ু গ্রহণ করতে হয়েছে।
গত বছর বাপার এক গবেষণায়ও বলা হয়েছে, ২০২০
সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছিল প্রায় ১০ শতাংশ। বায়ুমান গবেষণা
প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বায়ুমান সূচক
(একিউআই) বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে তারা।
মন্তব্য করুন