বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর সব মানুষের ওজন কত, জানা গেল গবেষণায়

অনলাইন ডেস্ক
১৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:১০ |আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ০৯:১১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর মোট মানুষের ওজন প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন টন। বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওজন মানুষের সম্মিলিত ওজনের ১০ শতাংশেরও কম। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মোট ওজন ২২ মিলিয়ন টন।

চলতি মাসে প্রকাশিত ইসরাইলের ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কেন দিন দিন প্রাণীশূন্য (বন্য ও গৃহপালিত) হচ্ছে ধরনী? পৃথিবীতে এখন প্রাণীকুলের সংখ্য কত? এ সবের নিখুঁত পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে এই চিত্র। বিবিসি, গার্ডিয়ান।

ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের এক দল গবেষক বন্য স্তন্যপায়ী বায়োমাসের (জৈব ফসিল, জৈববস্তু) প্রথম বিশ্বশুমারি তৈরি করেছে। সেখানে তারা দেখিয়েছে-পৃথিবীর প্রাণিজগৎ কতটা বিলুপ্তির পথে।

শুমারিটির রিপোর্টে বলা হয়, স্থলে এবং সমুদ্রের চেয়ে বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জৈববস্তু কম। তখনই উঠে আসে ওজনের প্রসঙ্গ। গবেষণায় তারা দেখেছেন, গবাদিপশু, শূকর, ভেড়া এবং অন্যান্য গৃহপালিত স্তন্যপায়ী প্রাণীর সম্মিলিত ওজনের চেয়ে বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওজন অনেক কম। গবেষকদের প্রধান প্রফেসর রন মিলো বলছেন, বায়োমাস প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। যা সব বন্য স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওজনের ৩০ গুণ (প্রায় ২০ মিলিয়ন টন) এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর (৪০ মিলিয়ন টন) ১৫ গুণ।

প্রফেসর মিলো আরও বলেছেন, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রজাতির বৈচিত্র্য আমাদের পৃথিবীকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু বায়োমাসের পরিমাণ থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে মানুষ এবং অন্যান্য পশু কত বেশি! শুমারিতে পাওয়া এ বিরাট ব্যবধান বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ব্যাপক হ্রাসের কথাই তুলে ধরে।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, বিশাল সমতল ও বনভূমিবেষ্টিত এই পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের কারণেই বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

প্রফেসর মিলো ও তার দল আরও একটি গবেষণা দ্য গ্লোবাল বায়োমাস অব ওয়াইল্ড ম্যাম্যালস মার্কিন জার্নাল প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে মিলো বলেছেন, সাদা লেজযুক্ত হরিণ এবং বন্যশূকর মানুষের উপস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ বলে মনে করে। এ কারণেই এই দুই প্রজাতিই মানববসতির কাছাকাছি পাওয়া যায়।

মিলোর সহযোগী গবেষক লিওর গ্রিনস্পুন এবং ইয়াল ক্রিগার, সব পরিচিত স্তন্যপায় প্রাণীর প্রায় অর্ধেকের বায়োমাস ডেটা সংগ্রহ করেছেন। বাকি অর্ধেক গণনা করার জন্য অন্যান্য প্রাণিবিদ্যার নমুনা (মেশিন-লার্নিং গণনামূলক মডেল) ব্যবহার করেছেন। লাফলে তারা দেখিয়েছেন, সামুদ্রিক ফিন তিমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জৈববস্তু রয়েছে।

গবেষকরা আরও বলেছেন, গৃহপালিত কুকুরের মোট ওজন প্রায় ২০ মিলিয়ন টন। যা সব বন্য স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর সম্মিলিত বায়োমাসের কাছাকাছি। পৃথিবীর সব বিড়ালের ওজন ২ মিলিয়ন টন। যা আফ্রিকান সাভানা হাতির প্রায় দ্বিগুণ।

জৈববস্তু গবেষণা প্রাণিজগতের পরিমাণ নির্ধারণের একমাত্র উপায় না হলেও এতে বিভিন্ন প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন এক হাজার ২০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে, যেগুলো সব স্থল স্তন্যপায়ী প্রজাতির এক-পঞ্চমাংশ এবং সব পৃথক বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুই-তৃতীয়াংশ।

গবেষকরা জানান, বায়োমাস প্রজাতির সমৃদ্ধি, বৈচিত্র্য এবং বিশ্বব্যাপী বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রাচুর্যের সূচক হিসাবে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, পৃথিবীর বন্যপ্রাণীর সংকট কতটা বেড়েছে।

সুতরাং বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষয় এখন কত দ্রুত হচ্ছে তা জরুরি বিষয় হিসাবে মূল্যায়ন করা দরকার। তাদের গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষ্য হবে গত ১০০ বছরে কতটা জৈববস্তুর ক্ষতি হয়েছে তা মূল্যায়ন করা।



মন্তব্য করুন