শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসক না হয়েও ৫০ জনের মৃত্যুসনদ ইস্যু করেন মিল্টন

নিজস্ব প্রতিবেদক
২ মে ২০২৪ ২২:০০ |আপডেট : ৬ মে ২০২৪ ২০:২১
মিল্টন সমাদ্দার
মিল্টন সমাদ্দার

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সহযোগীদের নিয়ে আশ্রমে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতেন। আশ্রমের খাবারের মান বজায় না রেখে অসহায় ব্যক্তিদের ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। তার আশ্রমে কেউ মারা গেলে নিজেই চিকিৎসক সেজে মৃত্যুসনদ ইস্যু করতেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০ জনের মৃত্যুসনদ তৈরি করে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দিয়েছেন।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমের মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় এমনই উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কামাল পাশা।

প্রতারণার অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২ মে) মিরপুর মডেল থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় কিশোর বালা নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়। তিনি মিল্টনের সহযোগী। এর আগে বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, টর্চার সেল, আয়ের উৎসসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ৯০০ মরদেহের ৮৩৫টির ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি মিল্টন। এসব অভিযোগে বুধ ও বৃহস্পতিবার মিল্টনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার মামলায় আজই মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন এসআই কামাল পাশা। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামি মিল্টন সমাদ্দার দীর্ঘদিন ধরে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি মৃত্যুসনদ দিয়েছেন। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠান খুলে সেবার নামে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন। মৃত সংক্রান্ত সঠিক তথ্য উদঘাটনে ও সেবার নামে আসামির অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা তদন্তে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

আদালতে মিল্টন বলেন, অসহায়দের অসহায় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিষয়ে ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি। সমাজকল্যাণ থেকে প্রথমে আবেদন গ্রহণ করেনি। আমার এখানে ১৩৫ জন মারা গেছেন। তাদের ডেথ সার্টিফিকেট আছে। কবরস্থানের জন্য হাইকোর্টসহ অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ জায়গা দেয়নি, কী করবো। কেউ মরদেহ দাফনের দায়িত্ব নেয়নি। এখনো ২৫৬ জন অসহায় ব্যক্তি আমার আশ্রমে আছেন। বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় চলে তাদের জীবন।

অর্থ উপার্জনের জন্য প্রতারণামূলকভাবে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করতেন মিল্টন

মামলার এজাহারে বলা হয়, মানবতার ফেরিওয়ালার অত্যাচার ও মারামারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মামলার বাদী সঙ্গীয় ফোর্সসহ মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে হাজির হলে আসামি মিল্টন সমাদ্দার পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় তাকে আটক করা হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার জানান, তিনি নিবন্ধিত চিকিৎসক নন এবং তার প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নিজে চিকিৎসক সেজে অপর আসামি কিশোর বালার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন চিকিৎসা দিতেন। ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসআপ ও ইমোর মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের এক কোটি ২০ লাখ ফলোয়ার আছে। এসব ফলোয়ার তার ইনকামের কৌশল।

অভিযানে মিল্টনের টেবিলে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও ডেথ সার্টিফিকেট, দুটি স্ট্যাম্প সিল পাওয়া যার। যায় একটিতে ইংরেজিতে এমডি মহিদ খান (Md Mohid Khan), অন্যটিতে বাংলায় মিল্টন সমাদ্দারের নাম লেখা।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা চায় মানবাধিকার কমিশন

জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন জানান, নিজে চিকিৎসক সেজে আশ্রমের অসুস্থ রোগীদের নিজেই মৃত্যু ঘোষণা করতেন এবং মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের মৃত্যুসনদ দিতেন। এসব কাজে তিনি ভুয়া সই ও সিল ব্যবহার করতেন।



মন্তব্য করুন