শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাউন্সিলরের একটি ছয়তলা ও দুটি চারতলা বাড়ি জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
৮ জুলাই ২০২৪ ০০:১৬ |আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩৭
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের চারটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এগুলোর মধ্যে একটি ছয়তলা ও দুটি চারতলা ভবন রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ রোববার বাড়িগুলো জব্দ করার আদেশ দেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সাড়ে সাত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। রূপগঞ্জে তাঁর নামে চারটি বাড়ি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও জমি পাওয়া গেছে। দুদকের পক্ষ থেকে আতিকুরের বাড়ি ও জমির তালিকা তুলে ধরে সেগুলো ক্রোক (জব্দ) করার আবেদন করা হয়। আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

দুদকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কাউন্সিলর আতিকুরের তারাবতে চার শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা বাড়ি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জমি কেনা হয়েছিল ২০১২ সালে। তারাবতে সাড়ে সাত শতক জমির ওপর নির্মিত ছয়তলা বাড়িটি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই জমি কেনা হয় ২০১৯ সালে। তারাবতে ৩৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত চারতলা বাড়িটিও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। জমি কেনা হয় ২০২০ সালে। এ ছাড়া তারাবতে ৫ শতক জমির ওপর আতিকুরের আরেকটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। এটার জমি কেনা হয় ২০১৯ সালে।

দুদকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে তারাব পৌরসভায় আতিকুর ২৮ শতক জমি কেনেন। পরের বছর (২০১৮ সাল) তিনি তারাব এলাকায় আরও চার শতক জমি কেনেন। একই বছর আতিকুর আরও দেড় শতক জমি কেনেন।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজীকে ফোনে করলে অন্য একজন ধরেন। আতিকুর রহমানের চার বাড়ি জব্দের আদেশের তথ্য জানানোর পর তিনি বলেন, মেয়র অসুস্থ। তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।

সাড়ে সাত কোটি টাকার সম্পদ আতিকুরের

আতিকুর রহমান ২০১৫ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আরও একবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চার বছর আগে (২০২০ সাল) তারাব পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুরের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ২০২১ সালে কাউন্সিলর আতিকুরকে তাঁর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দেয় দুদক। পরে দুদক কার্যালয়ে তিনি সম্পদের বিবরণী জমা দেন। আতিকুরের সম্পদ বিবরণীর তথ্য পর্যালোচনা করে দুদক জানতে পারে, আতিকুর স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেন ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তবে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, কাউন্সিলর আতিকুরের স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।

অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর গত ১৪ মার্চ কাউন্সিলর আতিকুরের রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আতিকুরের গ্রহণযোগ্য বৈধ আয় ৪০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তাঁর ঋণের পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য বিদায়ী সদস্য মতিউর রহমান, তাঁর দুই স্ত্রী, এক কন্যা ও ছেলের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এনবিআরের সদ্য বিদায়ী প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ ১৪ জনের সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। সিলেটের কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের ঢাকা ও গাজীপুরে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছেন আদালত। এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ ক্রোক করেছেন আদালত।



মন্তব্য করুন

সর্বশেষ খবর
এই বিভাগের আর খবর