শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যা বলেছেন হেফাজত নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ এপ্রিল ২০২১ ১৫:২৫ |আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২২
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসার সামনে হেফাজত নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসার সামনে হেফাজত নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলাম। বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক একটি সংগঠন। সাম্প্রতিক সময়ে নানান ইস্যুতে বেশ আলোচিত সংগঠনটি। হঠাৎই গতকাল রাতে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে সাক্ষাৎ করে। তাদের আলোচনার বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুখ খুলতে রাজি হননি উপস্থিত কেউ।

পরে অবশ্য নাম প্রকাশ না করার করার শর্তে কয়েকজন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। বৈঠকটিকে তারা কেউই বৈঠক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাননি। জানা যায়, হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে গণহারে গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি নিয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হাজির হয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা।

 

ওই বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলটির একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন যে তাদের আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয়টি এসেছে: ঢালাও গ্রেপ্তার বন্ধ, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং কওমি মাদ্রাসা খুলে দেয়া। তারা গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তিও দাবি করেন। ঢালাও গ্রেপ্তারের কারণে ভুল বোঝাবুঝির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।

 

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করলেও গ্রেপ্তার বন্ধের ব্যাপারে তাদের কোন আশ্বাস দেননি বলে জানা যায়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট মামলায় ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানান। চিহ্নিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রোজার মাসে কওমি মাদ্রাসার আয় বেশি হয় এবং অনেক মাদ্রাসায় এতিম শিক্ষার্থীরা থাকে উল্লেখ করে মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার কথা বললে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

 

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে হেফাজতের অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধানমন্ডির বাসায় ঢোকেন। রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। সংগঠনটির মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদীর নেতৃত্বে এ প্রতিনিধিদলে সদ্য আটক হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হকও ছিলেন।

 

হেফাজত নেতাদের দেখা করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করেই তারা বাসায় এসে হাজির হন। তারা দাবি করেন, হেফাজত নেতাদের যাতে গণগ্রেপ্তার না করা হয়। তবে আমি তাদের বলেছি, কোনও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে না। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাশপাশি করোনার কারণে বন্ধ কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তারা।

 

রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে দিনের বেলায় সংগঠনটির নেতারা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সাথেও বৈঠক করেছেন বলে জানা যায়।

 

এদিকে গতকাল সোমবার এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী দাবি করেছেন, হেফাজত দেশের বড় একটি অরাজনৈতিক দল। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কোন পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হেফাজত ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।

 

এদিকে নূরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, তারা গ্রেপ্তারকৃতদের জন্য আইনি লড়াই চালাবেন এবং একইসঙ্গে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। হেফাজতের যেসব নির্দোষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। ২০২১ সালে এসে ২০১৩ সালের মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? এসব মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে সবই মিথ্যা মামলা।

 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনও সংঘাতে যাবেন না। কোনও জ্বালাও পোড়াও করবেন না। হেফাজত ইসলাম ভাংচুর আর জ্বালাও পোড়াতেও বিশ্বাস করেনা।

 

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে হেফাজতের ইসলামির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।



মন্তব্য করুন