‘ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে করোনায় মরে যাওয়া অনেক ভালো’
যাত্রী না থাকায় অলস সময় পার করছেন রিকশা চালকরা
সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালান সোহেল মিয়া। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলায় যাত্রী না পাওয়ায় আয় রোজগার নেই তার। মূল সড়কে উঠলে দুই একজন মেলে, তাতেও পুলিশের বাধা। ফলে পরিবারকে ঠিক মতো তিন বেলা খাওয়াতে পারছেন না তিনি। তাঁর মতো অধিকাংশ চালকের এই অবস্থা।
রিকশা চালকরা
জানান, সারা দেশে করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে দ্বিতীয় বারের মত লকডাউন শেষ
না হতে আবারও লকডাউন বাড়ায় তাদের মাথায়
হাত। তারা বলছেন না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে করোনায় মরে যাওয়া অনেক ভালো।
রিকশা চালক
সোহেল মিয়া বলেন, ‘ছেলে মেয়ের মুখের দিকে থাকতে
পারি না, তাদের ঠিক মত তিন বেলা খেতে দিতে পারি না। ছোট
একটা ১০ মাসের ছেলে আছে আজকে তার খাওয়ার জন্য
দুধ লাগবে। যে কোনো মূল্যে সেই দুধের টাকা রোজগার করতে হবে।’
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, আলফাত স্কয়ার পয়েন্ট, কালী বাড়ী পয়েন্ট,
থানা পয়েন্ট, উকিল পাড়া পয়েন্ট, কাজীর পয়েন্ট, নবী নগর পয়েন্ট, হালুয়াঘাট পয়েন্ট, বক পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে রিকশার সিটের উপর বসে আছেন চালকরা। সরকারি,
বেসরকারি এবং বিনা প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায়
তারা এখন পর্যন্ত কোন টাকাই রোজগার করতে পারেননি। রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা কোথায় থেকে
দিবেন আর বাড়িতে চাল, ডাল কোথায় থেকে কিনে নিয়ে যাবেন সেটা
নিয়ে চিন্তিত তারা।
রিকশা
চালক রনি মিয়া বলেন, ‘করোনার মহামারির মধ্যে
জীবিকা নির্বাহের জন্য শহরে রিকশা নিয়ে আসা লাগে। কারণ বাসা থেকে বের না হলে ছেলে
মেয়েরা না খেয়ে থাকবে। কি ভাবে চাল,
ডাল কিনে বাসায় নিয়ে যাবো। সেটা নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তায় থাকতে হয়। তারপরও
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাই। রোজগার করতে পারি তাই দিয়ে কোন রকমের সংসারটা চলছে।’
আরেক চালক
মোজাফর মিয়া বলেন, ‘সকাল ৮টার সময় বের হই। কিন্তু
বাসা থেকে বের হলেই পুলিশ রিকশার বসার সিট নিয়ে যায়, অনেক সময় মারধর করে। চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। এখন আমরা গরিব কিভাবে বাঁচব
বলতে পারেন। লকডাউনে ঘরে বসে না খেয়ে থাকার চেয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া
অনেক ভালো।’
অনেক দিন
সন্তানদের ভালো কিছু মুখে দিতে পারেননি আক্ষেপ করে রিকশা চালক দিলু মিয়া বলেন, ‘আজকে অনেক দিন ছেলে মেয়েদের
ভালো কিছু খেতে দিতে পারি না। এখন পর্যন্ত শুধু ডাল আর ভাত কোন রকমে মুখে তুলে
দিচ্ছি। আজকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়ে বলে দিয়েছে বাবা মাছ নিয়ে এসো। এখন
পর্যন্ত রিকশা ভাড়ার ৬০ টাকাই রোজগার করতে পারলাম না। মাছ কি করে বাসায় নিয়ে যাবো?’
মন্তব্য করুন