শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস : প্রয়োজন আরও দায়িত্বশীলতা

সজীব সরকার
২১ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৪১ |আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৩:৪৫
সজীব সরকার
সজীব সরকার

করোনাভাইরাস যে খুব শিগগিরই বিদায় নিতে যাচ্ছে না- ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর কয়েকমাসের মধ্যেই এই সত্য বোঝা গেছে। টিকাতেও শতভাগ সুরক্ষা মিলবে না- এটিও শুরু থেকেই সবার জানা।

আর করোনার আরেকটি ঢেউ আসবে এবং তা আগেরটির চেয়ে ভয়াবহ হবে, সে কথাও বিশ্বজুড়ে আলোচনায় রয়েছে গত কয়েক মাস ধরেই। তাহলে বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে বর্তমানে যে বিপর্যয়, এর দায় কি সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন?

প্রতিদিন খবরে দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে ঘুরছেন; কোনো হাসপাতালে আইসিইউ পাওয়া তো দূরের কথা, সাধারণ বেডও মিলছে না অনেক ক্ষেত্রে। গত এক বছরে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের প্রস্তুতি কী ছিল, সে প্রশ্ন এড়ানো চলে না।

করোনাভাইরাস শিগগিরই বিদায় নিচ্ছে না, টিকায় এ রোগ থেকে নিশ্চিতভাবে সুরক্ষা মিলবে না এবং আগেরটির চেয়ে ভয়াবহ আরেকটি ঢেউ আসন্ন- এই তিনটি সত্য জানা থাকার পরও হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, এজন্যে বিশেষায়িত হাসপাতাল বা সেবা চালুর জন্যে শুরুর দিকে নেওয়া উদ্যোগগুলো বরং গত কয়েক মাস আগে বাতিল বা অকার্যকর হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে এটিই মনে হওয়া স্বাভাবিক, টিকায় সুরক্ষা মিলবে না জেনেও বিদেশ থেকে টিকা জোগাড়ই করোনা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্যখাতের একমাত্র কৌশল ছিল!

আর দোষ কেবল সবসময় সরকারের ওপর চাপালে চলে না; ব্যক্তি হিসেবে আমাদের নিজেদের ভুলের দায় নিজেদের ওপরও নেওয়া দরকার। করোনা শনাক্তের পর কিছুদিন সবকিছু বন্ধ ছিল বটে, তবে জীবন ও জীবিকার কথা ভেবে সরকার যখন একে একে সবকিছু খুলে দিয়েছে, সাধারণ মানুষ তখন সবসময়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতির মতোই জীবনযাপন শুরু করে দিয়েছে। রেস্টুরেন্টে আড্ডা বা পার্টি, ঘটা করে বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠান এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে যাওয়া শুরু হয়েছে কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই। বিশেষ করে পোশাক কারখানা, দোকানপাট ও এ ধরনের কর্মস্থলগুলোতে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা বা তা মানার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এমনটি নজরে আসেনি। গণপরিবহনগুলো শুরুর দিকে বোতলে পানি ভরে সেটিকেই জীবাণুনাশক বলে চালিয়ে দিয়েছে; দু-এক মাস পর থেকে তাদের সেই লোকদেখানো সুরক্ষা ব্যবস্থাও বন্ধ।

চীন থেকেই আসুক বা অন্য কোনো দেশ থেকে; ইচ্ছে করেই ছড়ানো হোক বা অনিচ্ছাকৃত দুর্যোগ- এই যে করোনাভাইরাস, এটি শেষ পর্যন্ত যে মানুষের অবিবেচক ও প্রকৃতিবিরোধী জীবনযাপনের কারণে সৃষ্ট, তা বোধ হয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ভাইরাসটি এভাবে ছড়িয়ে পড়া ও এতো প্রাণহানি ঘটানোর পরও মানুষ যে যথেষ্ট সচেতন হয়েছে, এমনটি বলার সুযোগ নেই।

ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্র- সবাই সচেতন না হলে এবং আন্তরিক ও সমন্বিতভাবে চেষ্টা না করলে করোনাভাইরাস বা কোনো সঙ্কটেরই সহজ সমাধান মিলবে না; কখনোই না। এই সত্য অস্বীকার করে লাভ হবে না- এর প্রমাণ মানবজাতি অতীতে দেখেছে, বর্তমানে দেখছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও দেখবে।

আমরা সবাই সচেতন হই; নিজের জন্যে, পরিবারের জন্যে, সমাজের জন্যে ও গোটা মানবজাতির জন্যে।

লেখক : সজীব সরকার : সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠাতা : মিডিয়াস্কুল ডট এক্সওয়াইজেড।



মন্তব্য করুন