বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইবি ছাত্রীকে সিনিয়রের হুমকি!

আজহারুল ইসলাম, ইবি
১১ মে ২০২১ ২১:১০ |আপডেট : ১১ মে ২০২১ ২১:৪২
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকির শিকার হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার নাম ফারুক হোসেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেইসবুক গ্রুপে (IUian-ইবিয়ান) স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এরপর ওই স্ট্যাটাস মুছে ফেলার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তাকে পুনরায় হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে প্রায় ৩ ঘন্টা পর ওই গ্রুপ থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ফারুক হোসেন তাকে সরাসরি ও ম্যাসেঞ্জারে বিরক্ত করে আসছিলেন। করোনাকালীন ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার আগেও বেশ কয়েকবার কুপ্রস্তাব দেয় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দল বেঁধে তাকে বাজে মন্তব্য করতেন এবং বিভিন্ন হুমকিও দিতেন। বিষয়টি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানায়। এর কিছুদিন পরেই করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়।

পরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসলে ফের ফারুক তার পিছু নেয় এবং তাকে আবারও কুপ্রস্তাপ দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ফারুক।

পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তা মুছে ফেলার জন্য হুমকি দেন ফারুক। সে ওই ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নেতাদের ও বড় ভাইদের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখান। পরে ওই গ্রুপ থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দেওয়া ফেসবুক পোস্ট ও তা প্রতিক্রিয়া। পোস্টটি পরে মুছে ফেলা হয়। ছবি: ফেসবুক

এছাড়া প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ছবি বিকৃতি করে ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও সিনিয়রদের কাছে পাঠায় ফারুক। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকেও বাজে ছবি এবং ভিডিও পাঠান অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, অভিযুক্ত ফারুকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীক হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে ম্যাসেঞ্জারে হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের আরও দুই ছাত্রীকে ম্যসেঞ্জারে উত্যক্ত করেছিলেন ফারুক।

এছাড়া ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর স্ট্যাটাসের পর বাংলা, ইংরেজি, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কসহ বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। সেই সাথে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছি। আমার নামে খারাপ ছবি দিয়ে আইডি খোলা, কুপ্রস্তাব ও  হুমকি ধামকির ঘটনার প্রতিকার চাই আমি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ফোন বন্ধ। ভুক্তভোগী এখনও অভিযোগ করেনি। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জেনে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।



মন্তব্য করুন