বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি, ইবি ছাত্রের বহিষ্কার দাবি

আজাহার ইসলাম, ইবি প্রতিবেদক
১৩ মে ২০২১ ২০:২০ |আপডেট : ১৩ মে ২০২১ ২২:০৯
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে হুমকিদাতা সেই ফারুক হোসেনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে অভিযুক্তকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায়।

ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক অনি আতিকুর রহমান ও সদস্য সচিব রায়হান বাদশা রিপন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফারুক হোসেনের কর্মকাণ্ড অনভিপ্রেত, বিব্রতকর এবং নারী সমাজকর্মীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়। ঐক্যমঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ইবি শাখার সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এ এইচ ওয়ালিউল্লাহ এক যৌথ বিবৃতিতে একই দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ফারুককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল সংগঠনে ফারুক হোসেনের সদস্যপদ আছে; সকল সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি (আইইউআইটিএস) এর সভাপতি এ এস এম ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় রোটার‍্যাক্ট ক্লাবসহ বেশ কিছু সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেন। তবে ক্লাবের সঙ্গে অভিযুক্ত ফারুকের কোনো যোগসূত্র নেই বলে স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় রোটার‍্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি রায়হান বাদশা রিপন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ফারুকের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

এদিকে অভিযুক্ত ফারুকের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্যামলী তানজিন অনু বলেন, এমন কুরুচিপূর্ণ কাজ শিক্ষার্থী সমাজের জন্য লজ্জাজনক। এমন অনেক মেয়ের সাথেই নোংরামি করেছে এই ফারুক। এইরকম জঘন্য অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি যেনো ইবিতে নজির হয়ে থাকে। এমন অপরাধ করতে হাজার বার ভাবতে হয়। এক ফারুকের বিচার না হলে শত ফারুক মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, অভিযুক্ত ফারুকের এমন কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। আর ফারুক যেসব ছাত্রনেতার নাম ব্যাবহার করেছে, তাদের সাথে ফারুকের কোনো যোগসূত্র নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাক্তি দাবি করছি; আর কোনো শিক্ষার্থী যেন এমন কাজ করার সাহস না পায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিকে সাদিক বলেন, ফারুক হোসেন যেটা করেছে তা নিন্দনীয়। সে হয়তো বিকারগ্রস্ত আর নয়তো তার স্বভাবজাত কাজ এটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অভিযুক্তকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে সাইবার বুলিং ও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন হেনস্তা বিষয়টি যেহেতু ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ভিসি স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমলে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর পূর্ণ পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অভিযুক্ত ছাত্রের সাথেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ঈদের ছুটির পর অফিস খুললে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার (১১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।



মন্তব্য করুন