মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহজ ভিসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যুক্তরাষ্ট্র
২০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩২ |আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৩২
পাসপোর্ট
পাসপোর্ট

করোনা ভাইরাসজনিত মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে আমেরিকান কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোতে ভিসা ইস্যু করার ক্ষেত্রে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল তা দ্রুত সমাধানের প্রদক্ষেপ নিয়েছেন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট। এর ফলে সহজেই যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা পাচ্ছেন ৫০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী।

 এসব ইমিগ্রান্ট ভিসাপ্রার্থীর ইন্টারভিউয়ের জন্য কনস্যুলেট বা দূতাবাসে উপস্থিত হওয়ার আবশ্যকীয়তা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছে। অতএব যাদের ইমিগ্রান্ট ভিসার আবেদন গত প্রায় দুই বছর আগে থেকে বিবেচনাধীন রয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ভিসা পাওয়ার জন্য আপাতত ব্যক্তিগত হাজিরার প্রয়োজন পড়বে না। তবে এ ব্যবস্থা নিতান্তই সাময়িক। ইমিগ্রান্ট ভিসার আবেদনের জট হ্রাস পেলে পুনরায় আবেদনকারীদের প্রচলিত নিয়মেই ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য কনস্যুলার অফিস বা দূতাবাসে যেতে হবে। গত সোমবার ফেডারেল রেজিস্টারে এ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে।

ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ইন্টারভিউয়ের সাময়িক প্রত্যাহারের এই আদেশ ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানান হয়েছে। এ বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোভিড ১৯ এর কারণে যেসব ভিসা আবেদনকারী কনস্যুলেট বা দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত হতে অসমর্থ এবং যাদেরকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট সময়-সীমিত (স্পেসিফিক টাইম-লিমিটেড ক্রাইটেরিয়া) মানদণ্ড পূরণ করবেন শুধু তাদের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ এর প্রয়োজন প্রত্যাহার করা হবে। ভিসা ইস্যু করার পর ভিসা লাভকারীকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে হবে। ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কোন অফিসার যদি তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ অনুমোদন করেন, তাহলে ইমিগ্রান্ট ভিসা লাভকারী সংশ্লিষ্ট বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হবেন।

কোভিড ১৯ ছড়িয়ে পড়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যার ফলে ইমিগ্রেশন বিষয়ক অনেক ঘোষণা আসে, যা বিদেশি বা নন-সিটিজেনদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ব্যাহত করে। ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোতে নিয়মিত ভিসা সার্ভিস সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে এবং যখন পুনরায় ভিসা ইস্যু করা শুরু হয়, তখনো তা ছিল অত্যন্ত মন্থর। ফলে বহু ভিসা আবেদন সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। নতুন ব্যবস্থায় ভিসা জট কিছুটা হ্রাস পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

যেসব ভিসা আবেদনকারীকে ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হতে হবে না এবং কনস্যুলার অফিসারের কাছে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে শপথ নিতে হবে না স্টেট ডিপার্টমেন্ট সে সম্পর্কিত শর্তবলী উল্লেখ করে।

তারা হচ্ছেন: যাদের ইমিগ্রান্ট ভিসা ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট অথবা এই তারিখের পর ইস্যু করা হয়েছে; যিনি ইমিগ্রান্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি; যিনি ইমিগ্রান্ট ভিসার লাভের যোগ্য ইত্যাদি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট উল্লেখ করেছেন যে ২০১৯ সালে ৪ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৪৯,০০০ বিদেশিকে ইমিগ্রান্ট ভিসা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ১১,০০০ এর অধিক ভিসার মেয়াদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগেই শেষ হয়েছে। নতুন ঘোষণার সঙ্গে যেসব আবেদনকারীর অবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় বা যাদেরকে ইতিপূর্বে ভিসা দেওয়া হয়েছিল তাদের নিজেদের অবস্থা জানার জন্য কনস্যুলার অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

দশ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট জনসংখ্যা কমেছে

গত দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বলে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ইউএস সেন্সাস ব্যুরো। ব্যুরোর পক্ষ থেকে অবশ্য এটিকে নতুন পরীক্ষামূলক উপাত্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ইমিগ্রান্ট সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা। কোভিড ১৯ এর বিস্তারের পর ইমিগ্রান্ট সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি আরো লক্ষ্যণীয়ভাবে ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান, সেখানে অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে যে জনশক্তি আবশ্যক, ইমিগ্রান্ট কর্মী ছাড়া তা পূরণ করা আদৌ সম্ভব নয়। কোভিড ১৯ এর দাপটে বহু প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ ছিল, বহু সার্ভিস অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে সেগুলো চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও নিয়োগকারীরা দেখতে পাচ্ছেন যে তারা প্রয়োজন লোক নিয়োগ করতে পারছেন না। এমনকি অধিক বেতনের অফার করেও কর্মী সংগ্রহ করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে লক্ষ লক্ষ পদ শূন্য পড়ে আছে।

আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভের এক রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৬০ এর দশকের পর থেকে ইমিগ্রান্ট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ লাখ, তার তুলনায় ২০০০ এর দশকে ইমিগ্রান্ট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৮ লাখ। কিন্তু এরপর ইমিগ্রান্ট সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে।



মন্তব্য করুন