শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরে শারদীয় দূর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত ১০০ মণ্ডপ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৫৮ |আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:১৯
শরীয়তপুরে শারদীয় দূর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত ১০০ মণ্ডপ
শরীয়তপুরে শারদীয় দূর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত ১০০ মণ্ডপ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করছেন শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পীরা।

আসছে পহেলা অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবছর শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলায় শারদীয় দূর্গোৎসবের ১০০টি মণ্ডপের মধ্যে ৯৮টি সার্বজনীন ও ২টি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১টি, নড়িয়ায় ৩৩টি, জাজিরায় ৫টি, ভেদরগঞ্জে ১৭টি, গোসাইরহাটে ৮টি, ডামুড্যায় ৬টি মণ্ডপ রয়েছে। ব্যক্তিগত দুটির একটি নড়িয়া উপজেলার চাকধ গ্রামের দীপক চক্রবর্তী ও অপরটি সদর উপজেলার বিমল অধিকারীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে।

শরীয়তপুরের সবচেয়ে বড় মণ্ডপ নড়িয়ার শ্রী শ্রী পাঁচক দাসপাড়া সার্বজনীন দূর্গামন্দিরের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পী গগণ শর্মা কাঁদা মাটির প্রলেপ শেষে রঙ তুলির আঁচড়ে প্রতিমাকে গড়ে তুলেছেন নিপুন শিল্পতায়। তবে দাসপাড়া মণ্ডপের ভিন্ন চিত্রে নজর কাড়ছে সবার।

এ মণ্ডপের মৃৎশিল্পী গগণ শর্মা বলেন, ‘আমি কাজ শেখার পর ৫ বছর ধরে পাঁচক দাসপাড়া মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ করতেছি। আমার কাজে খুশি হয়ে মন্দির কমিটি প্রতি বছরই আমাকে কাজ করার সুযোগ দেয়। আমি বংশগতভাবে পাল নই, তবে মাটির তৈরি এ শিল্পের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি কাজ শিখেছি। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যখন মৃত শিল্প প্রায় তখন গগণ শর্মার মত শিল্পীদের মৃৎশিল্পে আগ্রহী হতে দেখে আনন্দিত এ শিল্পের সাথে জড়িতরা।’

সদর উপজেলার শ্রী শ্রী হরিঠাকুরের দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পী রঞ্জিত পাল প্রতিমায় রঙ তুলির আঁচড়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। চকপাউডার, ডিসট্যাম্পার, প্লাস্টিক পেইন্ট, বিভিন্ন কালারের লিকুইড রঙ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা তৈরি করতেছেন তিনি। বেলে মাটি, এঁটেল মাটি, পাট দিয়ে প্রথমে প্রতিমা তৈরির মূল কাজের পরে রঙ তুলির আঁচড়ে দূর্গা মায়ের রূপ ফুটে ওঠে রঞ্জিত পালদের হাতে।

এ বছর রঞ্জিত পাল চট্টগ্রামসহ শরীয়তপুরে মোট ৩৩টি মণ্ডপ তৈরি করেছেন। বাংলা জৈষ্ঠ্য মাসের ৭ তারিখ থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করছেন তিনি। পঞ্চমীর আগে কাজ শেষ করতে হবে তার।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুরের পাল পাড়ার সন্তান রঞ্জিত পাল প্রতিমা শিল্পের কাজ শিখেছেন চট্টগ্রামের অমল পাল থেকে। কাজ শেখার পর প্রায় ১ যুগ ধরে নোয়াখালী, বরিশাল, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা তৈরি করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।

শিল্পীদের এক একটি প্রতিমা তৈরি করতে লেগেছে ১৫ থেকে ২০ দিন সময়। প্রতিমাগুলো তৈরিতে ৩ থেকে ৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেছেন। শিল্পীরা জানিয়েছেন প্রতিমার এক এক অংশের কাজ এক একজন করে থাকেন।

প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের সর্বনিন্ম ২৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে এ বছর। একটি প্রতিমা তৈরিতে ৩ থেকে ৫ ভ্যান মাটি, ৫ থেকে ৭ পৌন খড়ের আউর লাগে। এছাড়া কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের কুড়াসহ অন্যান্য জিনিসের প্রয়োজন হয়।

প্রতি ভ্যান মাটিতে খরচ পাঁচশত থেকে নয়শত টাকা, প্রতি পৌন আউড়ে খরচ পাঁচশত থেকে সাতশত টাকা, অন্যান্য বিষয়ের জন্য চার থেকে ছয় হাজার টাকার মত খরচ হয়।

নড়িয়া পৌরসভা আ.লীগ সভাপতি ও নড়িয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপে প্রশাসন যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছেন। আমরা সব সময় খেয়াল রাখছি মৌলবাদী শক্তি যেন কোনো ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠান করতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

মনোহর বাজার সংলগ্ন শ্রী শ্রী হরিঠাকুর দূর্গা মন্দিরের সভাপতি নীল রতন দাস জানান, মণ্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। প্রশাসেনর লোকজন নিয়মিত আসা যাওয়া করতেছেন। আশা করি সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করতে পারব।

শরীয়তপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত ঘটক চৌধুরী বলেছেন, ‘ইতিমধ্যেই অধিকাংশ মণ্ডপের কাজ শেষ হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি মণ্ডপে নিজস্ব ভলিন্টিয়াররা নিরাপত্তার কাজে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে। সকল মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামারা বসানো হয়েছে। এছাড়াও পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে চৌকস মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে যারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন।‘

শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক বলেন, ‘দূর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আমি প্রত্যেকটি মণ্ডপে সম্প্রতি কমিটি করে দিয়েছি, আমাদের বিট পুলিশিং কর্মকর্তা, অফিসার ইনচার্জরা প্রত্যেক ইউনিয়নের মণ্ডপগুলোতে নিয়মিত সাদা পোশাক ও পুরো পোশাকে টহল দিচ্ছেন। এছাড়াও আমি ব্যক্তিগতভাবে মণ্ডপগুলোতে নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যমে সার্বিক দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করতেছি। রাষ্ট্রীয়ভাবেও সিসিটিভির মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করছি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গোৎসবকে একটি আনন্দময় পরিবেশে রেখে সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো।’



মন্তব্য করুন