শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবৈধ থ্রি-হুইলার আটকের নামে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ

রেদোয়ান হাসান, সাভার প্রতিনিধি
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৮ |আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৮
সাভার হাইওয়ে থানা।
সাভার হাইওয়ে থানা।

দেশের মহাসড়ক গুলোতে তিন চাকার বাহন বা থ্রি-হুইলার চলাচলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। বরং সড়ক-মহাসড়কে বেড়েই চলেছে এই যানের সংখ্যা।

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের মহাসড়ক গুলোতেও রয়েছে এই থ্রি-হুইলারের আধিপত্য। আইন অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে এই যান চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

হাইওয়ে পুলিশ বলছেন, আদালতে নির্দেশনায় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে তারা।

তবে থ্রি-হুইলার চালক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে অভিযানের নামে পুলিশ বাণিজ্য ও চালকদের নির্যাতন করছে। গোপনে দালালদের মাধ্যমে জরিমানার কম টাকা দিলেই মামলা ছাড়াই জব্দ থ্রি-হুইলার ছেড়ে দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। আবার দালালদের মাধ্যমে মাসোহারা নিয়ে পুলিশ মহাসড়কে অবৈধ যানটি চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও নছিমন আটকে অভিযান পরিচালনা করে সাভার হাইওয়ে পুলিশ। এসব অবৈধ থ্রি-হুইলার আটকে মানা হয় না কোনো আইন। অবৈধ যানবাহন আটক করতে হাইওয়ে পুলিশ নিজেরাই অবৈধ বাহন লেগুনা ব্যবহার করেন।

আইনে বলা না হলেও সার্ভিসলেন থেকে থ্রি-হুইলার আটক করেন পুলিশ সদস্যরা। আবার অভিযানের সময় অটোরিকশা চালকদের শরীরে আঘাত করতেও দেখা গেছে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের। শুধু তাই নয়, থ্রি-হুইলার আটক করে সাভার হাইওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় বাণিজ্য।

থ্রি-হুইলার চালকদের অভিযোগ, হাইওয়ে থানা থেকে রিকশা ছাড়াতে এসে হয়রানি হতে হয় আরও বেশি। সকাল থেকে বিকেল আবার গভীর রাত পর্যন্ত থানার গেটে বসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। মামলার মাধ্যমে ২৬০০ টাকা দেওয়া হলে রিকশা ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশ। অনেক সময় চালক দালাল চক্র পুলিশের সঙ্গে আতাত করে জরিমানার কম ১০০০-১৫০০ টাকায় রিকশা ছাড়িয়ে নেয়। তখন মামলারও দরকার হয় না। এছাড়া দালালদের ২০০০-৩০০০ হাজার টাকা মাসোহারা দিলেও রিকশা ধরে না হাইওয়ে পুলিশ।

জামগড়া এলাকার জহুরুল হক নামের এক থ্রি-হুইলার চালক বলেন, কয়দিন আগে যাত্রী নিয়া বিশমাইল গেছি। তখন হাইওয়ে পুলিশ তাগো চামচা দিয়া আটকাইছে। পরে ১৫০০ ট্যাকা দিলে ছাইড়া দিছে। মামলা দেয় নাই। পরশুদিন পল্লীবিদ্যুতেও দালালেরা ধরছে। তখন ৫০০ ট্যাকা দিয়া চইলা আইছি। হাইওয়ে পুলিশ বেশিরভাগ সময় নিজেরা আইসা গাড়ি ধরে না। তাগো চামচারাই গাড়ি ধইরা নিয়া থানায় যায়। তারা ট্যাকা নিয়া ছাড়ে। রাস্তায় নামলেই পুলিশ আমাগো অত্যাচার করে। স্ক্রুডাইভার দিয়ে চাকা ফুটা করে, মিটার ভাঙ্গে। অনেক সময় শরীরেও আঘাত করে। কয়দিন আগেই শ্রীপুর এলাকায় এক রিকশার ড্রাইভারের মাথা ফাটায় দিছিলো এক ট্রাফিক পুলিশ। পরে ড্রাইভাররা ওই পুলিশরে ধইরা গণধোলাই দিছে। রাস্তাও আটকায় রাখছিলো।

শ্রীপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক থ্রি-হুইলার চালক বলেন, হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিমের সঙ্গে ল্যাংরা আলমের ভালো সম্পর্ক। আলমের মাধ্যমেই প্রায় ২০০-৩০০ ইজিবাইক মানথলি করা। মাসে এককেটা ইজিবাইক থাইকা নিম্নে ২০০০ হাজার ট্যাকা কইরা নেয় আলম। র বেশিও নেয়। আলম নিজেরও ৭-৮টা ইজিবাইক জিরানী থাইকা বাইপাইল পর্যন্ত চালায়।

এদিকে, নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করে চারটি ইজিবাইক চলাচল করার কথা ল্যাংরা আলম স্বীকার করলেও মাসোহারা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাভার হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম বলেন, কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি থ্রিহুইলার থাকি মাসিক নিই তাহলে আমি চাকরি ছেড়েলে যাবো।

আশুলিয়া থানা রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, পুলিশ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের নামে বাণিজ্য করে। প্রতিদিন শতশত রিকশা ধরে জরিমানার নামে অসহায় চালকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। দালালদের মাধ্যমেও অন্য উপায়ে চালকদের কাছে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অনেক সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন চালকরা।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তারপরও মহাসড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভিযানে জব্দ থ্রি-হুইলার জরিমানার মাধ্যমে চালকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।

এসআই আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, এ ধরণের কোনো বিষয় আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রমাণ পেলে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য করুন