শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রিপ্টো বাজারে ধস, ২০ হাজারের ঘরে বিটকয়েন

অনলাইন ডেস্ক
১৯ জুন ২০২২ ১১:০৮ |আপডেট : ১৯ জুন ২০২২ ১৭:৫৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের দরে রেকর্ড পতন হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে ডিজিটাল এই মুদ্রাটির।

রোববার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মূলত আর্থিক নীতির সম্ভাবনার মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের অভিমুখ নিম্নমুখী হয়ে পড়ায় এই দরপতন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, বাজার মূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বিটকয়েনের মূল্য শনিবার বিকেলে ১৩.৭ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। এতে করে এর মূল্য ১৭ হাজার ৫৯৩ ডলারে নেমে আসে। আর এর মাধ্যমেই গত ১৮ মাসে সবচেয়ে কম বাজারদরে পৌঁছেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি।

অবশ্য শুধু বিটকয়েন নয়, অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন ইথিরিয়াম, সোলানা এবং বিএনবিও ব্যাপক ধসের সম্মুখীন হয়েছে। বিটকয়েনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথিরিয়াম। এই মুদ্রার বাজারদর এখন এক হাজারের ঘরে। এটিও চলতি বছরে ৭৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ফলস্বরূপ, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সামগ্রিক বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসছে। এই ধসের ফলে বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধসের জেরে কার্যত দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, এই ধস আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আকার নিতে পারে।

ব্যাংক অব আমেরিকা কর্পোরেশনের ক্রিপ্টো এবং ডিজিটাল অ্যাসেটস স্ট্র্যাটেজির প্রধান আলকেশ শাহ গত শুক্রবার বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীরা গত বছরের লিকুইডিটি চালিত ডিজিটাল সম্পদের এই বাজারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সতর্ক মনোভাব দেখাচ্ছেন।’

তবে কঠিন পরিস্থিতি হলেও এখনই আশাহত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানাচ্ছেন তিনি। কারণ বিনিয়োগকারীরা নগদ প্রবাহ এবং লাভের পাশাপাশি সম্পূর্ণরূপে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রোড ম্যাপ তৈরি করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের পতন শেয়ার বাজার এবং অন্যান্য সম্পদের দামের পতনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যংকের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর্থিক নীতিকে ক্রমশ কঠোর করে চলেছে।

আবার অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো মৌলিক নীতি নেই। এবং শেয়ার বাজারের তুলনায় ব্যাপক অস্থিরতা কাজ করে এখানে। এর ফলে একটি বাবেল বা বেলুন তৈরি হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে কেন্দ্র করে যা ফেটে যেতেই এমন ভয়াবহ পতন।

অন্যদিকে ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিমত, বিটকয়েন কিংবা ইথিরিয়ামের দাম প্রচুর ওঠা-নামা করে এবং একসময় সর্বোচ্চ দামে গিয়ে পৌঁছয় যা ভালো অংকের মুনাফা তৈরি করে দেয়। তাই তারা মনে করেন, এটি বিনিয়োগ করার ভালো সময় এবং এই পতন থেকে খুব শিগরিই ঘুরে দাঁড়াবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার।

বিনিয়োগকারীদের অনেকে এটিও বলছেন, মৌলিক নীতি না থাকায় কখনও একটি কারেন্সি সেই উচ্চতা লাভ করতে পারে না। তাই সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত এখনো অন্ধকার।

উল্লেখ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা এবং তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে বর্তমানে এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা আট হাজারের বেশি এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন।

২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন এবং একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন করেন। দরপতনের আগে বিশ্বে ভার্চুয়াল এই মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণে পৌঁছেছিল। অন্যদিকে রেকর্ড দরপতনের আগে বিটকয়েনের মূল্য ছাড়িয়েছিল ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত।



মন্তব্য করুন